আলমাস হোসেনঃ ঢাকা জেলা প্রতিনিধি
ঢাকার আশুলিয়ার ফুটপাত এখন অবৈধ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে। ফুটপাতের জায়গা দখল করে বিভিন্ন দোকানের অংশ বর্ধিত করেছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পোশাক শ্রমিকসহ বিভিন্ন পথচারীদের। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মহাসড়কের সীমানা (ROW) হতে ১০ মিটারের মধ্যে হাটবাজার ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ। সম্প্রতি নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগের এ সংক্রান্ত নির্দেশনাবলী সম্বলিত একটি সাইনবোর্ডও রয়েছে। তবে এ নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহাসড়কের জায়গায় দেদারসে চলছে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রম। কিন্তু এসব দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব পালনে চরম উদাসীনতা দেখাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে বাইপাইল ও পল্লীবিদ্যুত এলাকায় এবং অপরপাশের চন্দ্রা অভিমুখী পল্লীবিদ্যুত বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের সীমানা থেকে ১০ মিটারের মধ্যে হাটবাজার ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সড়কের জায়গা ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়ক সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো জরুরী প্রয়োজনে কিংবা দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় স্পেস ব্যবহার করতে পারছে না এ পথ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন। এছাড়া কিছু বৈধ ব্যবসায়ীও তাদের নিজেদের সীমানার বাইরে গিয়ে মহাসড়কের এই নিষিদ্ধ ১০ মিটার জায়গা দখলে নিয়ে ব্যবহার করছেন।
বাইপাইল থেকে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের আগে এবং পরে সড়কের জায়গায় দেদারসে ইট, বালু ও সুরকি রেখে ব্যবসা করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। এছাড়াও রয়েছে স’ মিল, কাঠের দোকান, কার ও বাইক সার্ভিসিং এর দোকান।
আবুল হাসান নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এই মহাসড়কে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। এরা যত্রতত্র রঙ সাইডসহ উভয় দিক দিয়ে চলাচল করে। ফলে প্রায়ই ঘটছে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। আশুলিয়া ভূমি অফিসের আগে একটি ইউটার্ন রয়েছে। সেখানে চন্দ্রা অভিমুখী মহাসড়কের নিষিদ্ধ সীমানায় ইট ও বালু স্তুপ করে রাখায় স্পেস কমে গেছে। এতে ব্যস্ততম সড়কের এই ইউটার্নে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
ফরিদ আহাম্মেদ রাব্বি নামে এক পথচারী বলেন, চন্দ্রা অভিমুখী পল্লীবিদ্যুত বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের জায়গা ব্যবহার করে বসেছে বাজার। ফলে এই অংশেও সড়কের সার্ভিস লেন সংকীর্ণ হওয়াসহ ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। এর ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। মহাসড়কের সীমানা থেকে ১০ মিটার দূরত্ব সহজে বুঝা যায়। তা হলো, এই সীমানার পরেই বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো থাকে। তবুও তারা সরকারি সড়ক দখল করে আছে।
আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ বাজারে আসা আব্দুর রহমান বলেন, ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করায় পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একদিকে সড়কে থাকে অটোরিকশা। তারাও জটলা করে থাকে। এখন এই সড়কটি দিয়ে চলাচল করাটা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাইপাইলে কথা হয় পোশাক শ্রমিক রাতুল মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, শিল্পনগরী হওয়ায় আশুলিয়ার ব্যস্ততম এই মহাসড়ক ধরে পোশাক শ্রমিকদের নিত্য যাতায়াত করতে হয়। অধিকাংশই হেঁটে বাসায় ফেরেন। ফলে ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় তাদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। এই সমস্যা দ্রুত নিরসনের দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরাফাত সাকলায়েন বলেন, যে স্পটগুলোর কথা বলছেন, আমরা প্রতি মাসে একবার করে গিয়ে ভেঙ্গে দেই। কিন্তু তারপরও আবার ওগুলো হয়ে যায়। তবে নতুন করে ১০ মিটারের ভিতরে এপ্রোচ সড়কের অনুমতি দিচ্ছি না। যেগুলো রয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট সাথে নিয়ে সেগুলোও উচ্ছেদ করা হবে।
এ ব্যাপারে সাভার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আজিজুল হক জানান, বিভিন্ন সময়ে আমরা অভিযান চালিয়েছি। এই বর্ষা বাদলা শেষ হলে আমরা ওসব অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দেবো।