মানিক দাস ॥ আগামী ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চাঁদপুর জেলা বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনে অনিয়মের অভিযোগ এনে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন ৩ সভাপতি প্রার্থী ২ সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সহ ৫ প্রার্থী যৌথভাবে। ৩০ মার্চ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মমিনুল হক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন-২০২২ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাঝে করা হচ্ছে। আমরা আওয়ামীলীগের সরকারের ১৪ বছরের দুঃশাসন, মামলা হামলায় জর্জরিত রাজনৈতিক কর্মী। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের নামে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের সরকার দেশকে গণতন্ত্রহীন করে তুলেছে। আমরা দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রাজপথে। শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক দলের ভালোর জন্য অন্য কারো পরামর্শ গ্রহণ করেন না। এই সম্মেলনের স্থান, তারিখ নির্বাচন কমিশন নিয়োগ, অতিথিবৃন্দ সম্পর্কে চাঁদপুর জেলার অন্যান্য আসনের এমপি প্রার্থীগণ এবং আমরা যারা নির্বাচনে বিভিন্ন পদপ্রার্থী কারো সাথে আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০১৬ সালে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক তার মনিরা ভবনে কচুয়া উপজেলা বিএনপির সভায় তার বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান করায় বাড়ির মূলগেইট বন্ধ করে সাবেক এমপি আনম এহসানুল হক মিলনের সমর্থিত ১৫ জন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করেন। গত ২৫ মার্চ জেলা বিএনপির সম্মেলন সফল করার স্বার্থে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়ার উপস্থিতিতে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সভা চলাকালে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের নির্দেশে আমার সমর্থিত শাহরাস্তি হাজীগঞ্জের বিএনপি নেতাদের উপর ৪টি ককটেল নিক্ষেপ করে ৮ জনকে আহত করা হয়। গত ২৯ মার্চ সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামানকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের নির্দেশে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে সফিকুজ্জামানের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করা হয়।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ধারা-৬ এর (খ) উপধারা-৭ মতে কেন্দ্রের অনুমোদন ছাড়া কেহ কোন কমিটি ভাঙতে পারবে না। কিন্তু গত বছরের ২৩ অক্টোবর শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক কেন্দ্রের অনুমোদন ছাড়াই চাঁদপুর সদর উপজেলা পৌরসভা ও হাইমচর উপজেলার ১০১ সদস্যের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে সম্মেলনের জন্য অনুমোদিত ১ হাজার ৫শ ১৫ জন কাউন্সিলর থেকে ৬৮ জন নেতাকে বাদ দিয়ে নিজ স্বাক্ষরে ও নিজের পছন্দের ২৮ জনকে কাউন্সিললের তালিকায় সংযুক্ত করে ৩টি কমিটি অনুমোদন দেন যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। নির্বাচন কমিশনার অ্যাডঃ শামসুল ইসলাম মন্টু বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন। ২৪ মার্চ নির্বাচন কমিশনের স্বাক্ষরিত প্রার্থী পদে শর্তাবলী দফা-৫, উল্লেখ রয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে ইচ্ছুক, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, সদস্য সচিব পদে থেকে পূর্বাহেন পদত্যাগ করে পদত্যাগ পত্র দাখিল করতে হবে। অন্যথায় প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল বলে গণ্য হবে। কিন্তু অ্যাডঃ শামসুল ইসলাম মন্টু শেখ ফরিদ আহমেদ মানিককে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য বিএনপির গঠনতন্ত্রের বিশেষ বিধান-১৫ এর (খ) জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোন কর্মকর্তা অংশটি চাতুরতার সহিত বাদ দিয়ে শর্তাবলী প্রয়োগ করেন।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ধারা-৬ (খ) উপধারা-৭ মতে মাহবুবুর রহমান শাহীনের সভাপতির পদ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেন। গঠনতন্ত্রের বিশেষ বিধান-১৫ মতে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক প্রবাসী কল্যান বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে ৯৬ তম কর্মকর্তা। তাই শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সভাপতি পদপ্রার্থী হতে পারেন না। তাই তার সভাপতি পদপ্রার্থী মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করা যুক্তিযুক্ত। ২২ মার্চ তারিখে নির্বাচনের তফসিল দফা-৫ এ উল্লেখ ৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ, বেলা সাড়ে ৩টায় ভোট গণনা শেষ ফল প্রকাশ করা হবে। নির্বাচন কমিশন ২য় সংশোধনী দফা-৫ এ উল্লেখ করেন দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ভোট গ্রহণ করা হবে। সন্ধ্যা ৬টায় ভোট গণনা শুরু হবে, কাউন্সিলরগণ থাকবেন না। কাউন্সিলরদের প্রদত্ত ভোট কারচুপির মাধ্যমে গণনা, পেশী শক্তি ব্যবহার করে ফলাফল শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের পক্ষে নেওয়ার জন্য তফসিল পরিবর্তন করা হয়েছে বলে দাবি জানান। ২ এপ্রিল বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে অনৈক্য, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি এড়িয়ে চলার জন্য ১৫টি সাংগঠনিক ইউনিট স্ব স্ব এলাকায় নিজস্ব মতামত, দলের মহাসচিবের নিকট প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করেছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সভাপতি প্রার্থী জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এস.এম.কামাল উদ্দিন চৌধুরী, সভাপতি প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান শাহীন, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা খান সফরী, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী গোলাম মোস্তফা, চঁাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, সাবেক সভাপতি শরীফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সোহেল রুশদী, এএইচএম আহসানন উল্লাহ, আলম পলাশ, শাহাদাত হোসেন শান্ত সহ স্থানীয়, জাতীয় ও বিভিন্ন চ্যানেলের প্রতিনিধিগণ।