গতকাল ২৮ জুন শনিবার সকাল ১১ টায় চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। চাঁদপুর জেলা গণফোরামের সভাপতি অ্যাডঃ সেলিম আকবরের সভাপতিত্বে ও শহর গণফোরাম সাদারন সম্পাদক মাহমুদুর হাসান সুমন মিজির সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গণফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক লতিফুল বারি হামিম, কোষাধক্ষ্য শাহ নুরুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক চিত্র শিল্পী আজাদ হোসেন, লক্ষ্মিপুর জেলার গণফোরামের আহ্বায়ক বোরহান উদ্দিন, কেন্দ্রীয়কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, রওশন ইয়াজদানী।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে বলেন, আমরা এখানে একত্রিত হয়েচি শেকসভায়। অ্যাডঃ ফজলুল হক সরকার গণফোরামের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, তিনি ছাত্র রাজনীতিতে ভূমিকা রেখেছিলেন। শুধু মুক্তিযোদ্ধা নয় সকল আন্দোলন সংগ্রামেই নয় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী বারে তিনি নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। একটি আইন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এ জেলায় শিক্ষিত সমাজ পেশায় ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য ছিল তার ভূমিকা। ফজলুল হক সরকার শিক্ষা অনুরাগ হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। আমরা গণফোরামের এক বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ কে হারিয়েছি। তিনি অসুস্থ শরীরে শেখ হাসিনার হটানোর আন্দোলনে ঢাকায় আমাদের সাথে রাজপথে ছিলেন। আমরা গত কিছুদিন পূর্বে আরো একজন আইনজীবী ও গণফোরাম উপদেষ্টা গোপালগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন কে হারিয়েছি। কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক কে আমরা হারিয়েছি। আমরা সর্বশেষ হারিয়েছি গণফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা বাহিনীর বিএলএফ বাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযুদ্ধা সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা মহসীন মন্টুকে। ৬০ এর দশক থেকে ছাত্র আন্দোলনের প্রতীকৃত, ৯০ এর গণআন্দোলন ও সর্ব শেষ শেখ হাসিনা হটানোর আন্দোলন সহ বহু আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন রাজপথে থেকে। তিনি বয়সের শেষে এসে ফুসফুসে রোগে আক্রান্ত হন। অক্সিজেন সিলিন্ডার সাথে নিয়ে শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে রাজপথে সভা সমাবেশে, খোলামাঠে এসে বক্তব্য দিয়েছেন। কয়েকদিন আগে তিনিও পরপারে চলে গেছেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সংবিধানের প্রনেতা,আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজিবী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবধিক প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ঢালাও প্রতীক দায়িত্ব নিয়ে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন আমাদের প্রিয় নেতা ডঃ কামাল হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগের অসুস্থ রাজনীতির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাস দুর্নীতি ও কালো টাকা এবং রুগদ্ধ রাজনীতির বিরুদ্ধে সুস্থ রাজনীতির অঙ্গীকার নিয়ে গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে সম্মেলনের মধ্যদিয়ে ১৯৯৩ সালে এই গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। ঐতিহাসিক দিন দিন ব্যাপী যে সম্মেলন হয়েছিল সেই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আজকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মোঃ ইউনুস। সেদিন তিনি লিখিত একটি বক্তব্য পাঠ করেছিলেন । কয়েকদিন পূর্বে আমরা যখন ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম আমাদের নেতা ডঃ কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এখানেও মোস্তফা মহসিন মন্টু সাথে ছিলেন। নাকি মুখে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে মোস্তফা মহসিন মন্টু ডঃ মোঃ ইউনুসের পাশে বসা ছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে যমুনার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দিয়েছিলাম। আমাদের একটা স্বপ্ন ছিল, আর সেই স্বপ্নটাই সেদিন সবার সামনে সেদিন তুলে ধরেছিলাম। যেই ঐতিহাসিক দিনে গণফোরাম প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ডঃ কামাল হোসেনের পাশে মোস্তফা মহসিন মন্টু হাজার হাজার নেতা কর্মী নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় ঢাকায় মোস্তফা মহসিন মন্টু ইতিহাসের অংশ। সেদিন তিনি যে অঙ্গীকার করেছিলেন অসুস্থ রাজনীতির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাস দুর্নীতি ও কালো টাকা এবং রুগদ্ধ রাজনীতির বিরুদ্ধে সুস্থ রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করবো। মোস্তফা মহসিন মন্টু ও অ্যাডভোকেট ফজলক সরকার তাদের সেই অঙ্গীকার থেকে মৃত্যু অবধি সাড়ে দাঁড়াননি। এটি হচ্ছে পরিছন্ন রাজনীতি। আপনারা জানেন ৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর পর থেকে ডঃ কামাল হোসেন কখনোই আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে আপোষ করেন নাই। যদি তারা বিভিন্ন সরকারের সাথে আপোষ করতেন তাহলে ডক্টর কামাল হোসেন ও মোস্তফা মহসিন মন্টু প্রতিনিধিত্ব করতে পারতেন। সেই সময় তিন জনের যে রূপ রেখায় প্রণয়ন করেছিল তখন ডঃ কামাল হোসেন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কামাল হোসেনের পাশে নুর হোসেন ছিল। সে শহিদ হয়ে যায়। ডঃ কামাল হোসেন বলেছিলেন আমি নূর হোসেনের রক্তের সাথে বেইমানি করতে পারবো না। আমাদের নেতারা সেটা কখনোই করে নাই। আজকে যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন আমরা তাদেরকে ফিরে পাবো না। আমরা আগামী মাসে একটি নাগরিক শোক সভা করবো তাদের স্মরনে। আমরা গণফোরাম বিগত ৩১ বছর ধরে আমরা এ দেশের গনতন্ত্র, দূর্নিতী মুক্ত রাস্ট্র এবং ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছি। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ডঃ কামাল হোসেনের কাছে চরে আসে। আপনি নেতৃত্ব দেন আমরা একটি অর্থবহ নির্বাচন চাই। সেদিন ড কামাল হোসেন অসুস্হ শরির নিয়ে সারা দেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। ডঃ কামাল হোসেনের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার সাথে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে সমস্ত দল অংশ নিয়েছিল। সেদিন শেখ হাসিনা বলেছিল আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমার প্রতি আস্থা রাখেন। যেখানে দিনের ভোর রাতে করে সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। আপনারা জানেন গত ১৬ বছরে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেটা প্রশাসনে নির্বাচন ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ও গণতন্ত্রের সকল প্রতিশ্রুতিতে ধ্বংস করেছে শেখ হাসিনা। তিনি নির্বাচন কমিশন, দূর্নীতি দমন কমিশন, কর্ম কমিশন সব কিছুতে দলীয় করন করা হয়েছিল। আমরা এইসব ওই সরকারের বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক দল আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলাম, শেখ হাসিনার দুঃশাসন থেকে বাংলাদেশের রক্ষা করার জন্য। জুলাই আন্দোলনে আমি গণফোরামের ব্যানার নিয়ে পল্টন মোড়ে সমাবেশ করেছি। সেই দিন পুলিশ আমাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছিল। তারা আমাদেরকে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। সেকান থেকে মিছিল নিয়ে আমরাসপ্রেসক্লাব সম্মুখে যাই। আমি বরেছিল যে ভাবে ছাত্রদের যে ভাবে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে তা বন্ধ করা হোক। ডঃ কামাল হোসেনের কণ্যা ব্যারিস্ট্রার সায়রা হাই কোটে মামলা করেছিল ছাত্রদের উপর গুলি বন্ধের জন্য।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, গণফোরাম এ দেশের গণ মানুষের জন্য কাজ করছে। গণফোরাম জনগনের বাসস্হান, চিকিৎসাসহ সকল কিছু আদায় করার জন্য কাজ করছে। গণফোরাম এদেশে সুসাশন প্রতিষ্টার জন্য কাজ করছে। গণফোরাম কোনো চর দখল করেনি, বালু মহল দখল করনি। গণফোরাম দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে। গণফোরাম ফ্যাসিস্টদের মতো বাংলাদেশ ছেড়ে অন্যদেশে পালিয়ে যায়নি। সেলিম আকবর যেমনি ভাবে আপনাদের নিয়ে কাজ করছে আপনারা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন দলকে।
মোস্তফা মহসিন মন্টুর এ দেশের জন্য অবদান কিন্তু কম নয়। তিনি আওয়ামী লীগের দূসময়ের কান্ডারী ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ১৭ বছরে তিনি এ দল থেকে কোনো ধরনের সুবিধা নেননি। আন্দোলন হয়েছে জাতী রক্ত দিয়েছে পার্লামেন্ট গঠনের জন্য। জামায়াত ইসলাম পাকিস্তানের দাল আর আওয়ামী লীগ ভারতের দালাল। বিএনপি, গণফোরাম সহ অন্যান্য দল এদেশের জনগনের জন্য রাজনীতি করে। এনসিপি নামের ছাত্ররা দল গঠন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে বানচাল করার চেষ্টা করছে। তারা বলছে তারাই নাকি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ কে এদেশ থেকে বিতারিত করেছে। আন্দোলনে কোনো ছাত্র নিহত হয় নি, নিহত হয়েছে সাধারন জনগন। ডঃ ইউনুস তত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা করছে। একজন তত্বাবধায়ক সরকার কত দিন ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দেয়। আর ডঃ ইউনুস সেই নির্বাচন এখন ফেব্রুয়ারী মাসে করার কথা বলছে। এটাও তার মিথ্যাচর। মোস্তফা খান মন্টুরা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকেই যুদ্ধ শুরু করেন। সেটা কেন করেছেন, এদেশের মানুষের জন্য। মোস্তফা খান মন্টুর নাম মুক্তিযুদ্ধ থেকে বাদ দেয়া যাবে না। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে মোস্তফা খান মন্টুর অবদান কিন্তু কম ছিলনা। তিনি হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথ দখল করে রেখে এরশাদ কে ক্ষমতা থেকে বিতারিত করেছিলেন।
আরো বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডঃমোহাম্মদ বাবর বেপারী,হাজেরা হাসমত ডিগ্রী কলেজর প্রভাষক মনিরুজ্জামান চৌধুরী,শহর জামায়াত ইসলামির সাধারন সম্পাদক অ্যাডঃ শাহজাহান খান,বাসদ চাঁদপুর জেলা শাখার সম্ময়ক শাহজাহান তালুকদার,কমিস্ট পাটির চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গির হোসেন, ডাঃ মিজানুর রহমান, আলী আশ্রাফ বাবু সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম আহ্বায়ক বাসুদের মজুমদার,ফরিদগঞ্জ উপজেলা গণফোরামের সাবেক সভাপতি হাজী মাওঃ ফারুক,জেলা গণফোরাম যুব ও ক্রিয়া সম্পাদক বিজয় মজুমদার,দপ্তর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম, শহর গণফোরামের সভাপতি অ্যডঃ আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদল হাসান সুমন প্রমুখ।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলোয়াত করেন আবু সুফিয়ান ও পবিত্র গীতা পাঠ করেন সুভাস সাহা।