মানিক দাস ।। সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজের ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিকৃত নবগত ছাত্র -ছাত্রীদের নবীন বরণ, কৃতিসশিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৮ অক্টোবর রবিবার সকাল ১১টায় নবীব বরন ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা লে: এম এ ওয়াদুদ (অব:)। এসময় তিনি বলেন, আমাদের পরিবার সম্মিলিতভাবে এ এলাকার আত্মসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইসলাসপুর ইউনিয়নের উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নে সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ কলেজের অনেক প্রাত্তন শিক্ষার্থী বিসিএস ক্যাডার হয়ে বড় পদে চাকুরী করছে। ইসলামবাদ ইউনিয়নের উন্নয়ন হলে সমাজ ও দেশের উন্নয়ন হবে বলে আমি মনেকরি। সুজাতারপুর ডিগ্রি কলেজেকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপদান না করা পর্যন্ত সৃর্ষ্টিকর্তা যেন আমাকে পৃথিবী থেকে না নেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে সমাজ ও দেশ গঠনে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজের সুনাম সমুন্নত রাখতে শিক্ষার্থী, অবিভাবকরা ভূমিকা রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি এ বছরের মধ্যে কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪টি মিনিবাসের ব্যাবস্থা করবো। শিক্ষার্থীরা ফ্রিতে স্কুল ও কলেজে যাতায়ত করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, গতকাল মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাথে সাক্ষাৎকালে কলেজ সম্পর্কে কথা বলেছি, মন্ত্রি বলেছেন শিঘ্রই সুজাতপুর ডিগ্রী কলেজে ১০ তলা ভবনের বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়াও কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরের জন্য আমার আন্তরিকতার কমতি থাকবে না।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, এবছর ১৫ জন কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও শিক্ষা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। আমি চাই এর সংখ্যা যেন শত শত হয় সেটি আমি আশাকরি। তোমরা ভাল ফলাফল করবে তোমাদের পাশে কলেজ কর্তৃপক্ষ থাকবে। তিনি আরো বলেন, ৭ই মার্চ ১৯৭১ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর মুক্তিযুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে যাই। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঊষালগ্ন থেকেই আন্দোলন ও সংগ্রাম অবশেষে ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ ইং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পর ২৮ মার্চ ১৯৭১ তৎকালীন এমপিএ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এবি সিদ্দিক সাহেবের নেতৃত্বে আমি এবং লেফটেন্যান্ট দিদারুল আলম চাঁদপুরে মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলি। আমাদের বাহিনীতে অবসরপ্রাপ্ত ছুটিরত ও বিভিন্ন বাহিনী হইতে বিদ্রোহ করে আসা সেনাবাহিনী ইপিআর পুলিশ আনসার সমন্বয়ে প্রায় ৩০০ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সদস্যদের সমন্বয়ে মুক্তি বাহিনী গড়ে তুলি। এই বাহিনীর তত্ত্বাবধান করেন চাঁদপুর মহাকুমা সংগ্রাম কমিটি। ৭ এপ্রিল ১৯৭১ইং কুমিল্লা হইতে হানাদার বাহিনীর সন্ধ্যা ৬ ঘটিকা সময় চাঁদপুর এসে আক্রমণ করে। আমরা আমাদের সীমিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে সারারাত চাঁদপুর শহরের অদূরে টেকনিক্যাল হাইস্কুলের সামনে প্রতিরোধ করে আটকিয়ে রাখতে সক্ষম হই। এবং শহর থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাধারণ নারী-পুরুষদের নিরাপদ অবস্থানে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেই। গোলাবারুদ স্বল্পতার কারণে ও বিমান থেকে ব্যাপক গোলাবার্ষণের ফলে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে যায়। ৮ এপ্রিল ১৯৭১ইং সকাল ৭ টার সময় আমাদের প্রতিরোধ অবস্থান তুলে নেওয়া হলে হানাদার বাহীনি বাধাবিহীন চাঁদপুর শহরে ঢুকে পড়ে। এবং চাঁদপুর শহর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। অতঃপর পূর্ব নির্ধারিতভাবে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ইং ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া হাইস্কুলের সামনে পুনরায় একত্রিত হই। এবং সেই দিনেই গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী সরকার গঠন করা হয়। স্থানীয় সকল এমএনএ, এমপিএদেরকে এবং সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এবি সিদ্দিক এমপি এ. গোলাম মোর্শেদ ফারুকী এমপি এ সাহেবের তত্ত্বাবধানে ও আমার নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর জন্য নিরাপদ স্থান বিবেচনায় চাঁদপুর উত্তরাঞ্চলে সুজাতপুর জুনিয়র হাই স্কুলে সদর দপ্তর গঠন করা ওই অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করি। ১৯৭১ সালের ২০ই নভেম্বর দাউদকান্দি উপজেলার গোয়ালমারী নামক স্থানে আমার নেতৃত্বে সম্মুখে যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর শতাধিক সেনা সদস্য হতাহতের মাধ্যমে এবং হানাদার বাহিনী আমাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। ওই যুদ্ধে আমি
মারাত্মকভাবে আহত হই। সুস্থ হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সামরিক বাহিনীর চাকরি থেকে
পদত্যাগ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায় চলে আসি। বঙ্গবন্ধু আমাকে প্রশাসক করে মতলবে পাঠান।
আলোচনা সভায় সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মাসুদ পারভেজের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মতলব উত্তর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদউল্লাহ, চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলী মাষ্টার, মৃনাল কান্তি সাহা, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত দাস, দুর্গাপুর জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সূত্রধর, নন্দলালপুর ছামাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সরোয়ার হোসেন, নেছারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজালাল, মমরুজকান্দি সপ্তগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম, ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ, সুজাতপুর কিন্ডার গার্ডেনের অধ্যক্ষ নুরুল আমিন পাটওয়ারী আব্দুল, সুজাতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালেহা আহমেদ।
অনুষ্ঠান যৌথ ভাবে পরিচালনা করেন জীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোরশেদ আলম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক শেফালী বেগম ও উৎপান ও বিপনন বিভাগের প্রভাষক নুরুন নাহার।
অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের প্রধান, চতুরঙ্গের মহাসচিব হারুন আল রশিদ, চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গণসংযোগ কর্মকর্তা অভিজিত রায়, সহকারী অধ্যাপক মোঃ আতাউল্যাহ , অবিভাবকবৃন্দ ও ছাত্র ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন ছাত্র শাহপরান ও গীতা পাঠ করেন শ্রাবনী রানী।
পরে চাঁদপুরের প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক সংগঠন চতুরঙ্গ ও রংধনু সৃজনশীল নৃত্য সংগঠনের শিল্পীরা মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশ করে শিক্ষার্থীদের মোহিত করে।