মোজাম্মল আলম ভূঁইয়া- প্রতিনিধি,সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। একারণে হাওর এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে বন্যার আতংক। আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) জেলা শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৬১ সেন্টিমিটার নিচ পর্যন্ত প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও সীমান্ত নদী যাদুকাটা, চলতি, বৌলাই, রক্তি, পাটলাই, কালনী ও কুশিয়ারা দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি দ্রুত প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জ জেলায় ১৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন- গত ৪৮ ঘন্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রায় ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকাল পর্যন্ত বিপদসীমার ১.০১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুুরমার পানি বিপদসীমার বিছুটা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও নদী ফুলে উঠেছে। তবে হাওরগুলো এখনও পানিশূন্য থাকায় বন্যা হওয়ার আশংকা অনেকটাই কম। তবে আগামী কয়েক দিন সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বিপদসীমা অতিক্রম করবে।
এদিকে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যাদুকাটা নদীর পানি উপচে গতকাল বুধবার (১৪ জুন) বিকাল থেকে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা এলাকায় অবস্থিত ১০০ মিটার সড়কের প্রায় ১কিলোমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে হাওরে প্রবেশ করছে। এমতাবস্থায় মানুষ যানবাহন দিয়ে দূর্ঘটনার ঝুকি নিয়েই ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। গত বছরও এসময়ে এমন আবহাওয়া ছিল। ফলে এবারও ভয়াবহ বন্যার আতংক দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
এব্যাপারে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খলা এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন, দিলোয়ার মিয়া, হুমায়ুন কবিরসহ আরো অনেকেই বলেন- ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল এসে রাস্তার ওপর দিয়ে হাওরে পানি ডুকছে। বজ্রপাতের কারণে মানুষ ঘরের বাহিরে যেতে পারেনা। এভাবে বৃষ্টি হলে ঢলের পানির পরিমান আরো বেড়ে যাবে। তাই বন্যা নিয়ে আতংকের মাঝে আছি।
জানা গেছে- গত বছরের ১৬ জুন সকালে ঢলের পানি এসে সুনামগঞ্জ শহরসহ পুরো জেলায় প্রবেশ করে। এরপর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সব প্লাবিত হয়ে যায়। বিদ্যুৎহীন হয়ে, বন্ধ হয়ে যায় ইন্টানেট সেবা। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। পরে ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত নিয়েই আশ্রয়ের সন্ধানে ঘর ছেড়ে বের হয় অসহায় মানুষ। অবশেষে সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্টান ও অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন উচু জায়গায় দিয়ে আশ্রয় নেয়। ৪দিন যাবত সারাদেশে থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে সুনামগঞ্জ জেলা। ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রায় ৩০লাখ মানুষ। বাড়িঘর বিধ্বস্থ হয় প্রায় ৫০হাজার। মৃত্যু বরণ করেন ১৫জন।