আবুল কালাম আজাদ, মুরাদনগর থেকে :
কুমিল্লার মুরাদনগরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। এতে বিলীন হচ্ছে উপজেলার তিন ফসলি কৃষি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকগণ কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেও কোন ফল হচ্ছে না। উল্টো ড্রেজার ব্যবসায়ী চক্রের কাছে জিম্মি জমির মালিকরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অভিযানে গেলে ঘটনাস্থলে পৌছাঁর আগেই টের পেয়ে যায় ড্রেজার ব্যবসায়ীরা। যার ফলে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে পাওয়া যায়না। অভিযান শেষে ফিরে আসার ঘন্টা পার না হতেই আবারো পুরো দমে চলে মাটি উত্তোলন। ফলে স্থানীয়দের মুখে এখন একটাই শব্দ অভিযান কি শুধু লোক দেখানো?
জানা যায়, উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের কোন না কোন স্থানে অবৈধ ড্রেজার মেশিন চালায় স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ভূমিখেকো চক্র। মাইলের পর মাইল পাইপ সংযোগ দিয়ে ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে কোথাও ফসলি জমি আবার কোথাও পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। বর্তমানে অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারনে ৫০/৬০ ফুট গভীর থেকে মাটি ও বালি উত্তোলনের ফলে আশ-পাশের তিন ফসলের জমিগুলো কূপে পরিনত হচ্ছে।
সরেজমিনে গেলে উপজেলার মুরাদনগর ধামঘর ইউনিয়নের মুগসাইর গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, মুগসাইর গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে সোহেল খান ড্রেজার বসিয়ে গভীর ভাবে মাটি কাটার কারনে সরকারি খালসহ তিন ফসলী জমি ড্রেজিং গর্তে বিলীন হয়ে গেছে। কৃষকরা ইচ্ছা করে জমি দিতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত ড্রেজার মালিকদের নিকট কমমূল্যে জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সচেতন মহল বলছে, পুলিশ চাইলে ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করতে পারে। যেহেতু এটি একটি ফৌজদারী অপরাধ। কিন্তু ড্রেজার ব্যবসায়ী ও পুলিশের মধ্যে চোর-পুলিশ খেলাটা সকলের মধ্যে এখন সন্দেহের কারণ। কেননা পুলিশ আসার আগেই ড্রেজার ব্যবসায়ীরা খবর পেয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমান ২৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর। এর মধ্যে বেশীর ভাগই দুই থেকে তিন ফসলী জমি। অথচ পুকুর ও ডোবা করার কারণে মাঠের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত অনাবাদী রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবেল খান পাপ্পু বলেন, ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে মাটি কাটার অবস্থা দেখে আমি উদ্ধিগ্ন ও আতংকিত। কেননা তিন ফসলি জমির টপসয়েল্ট (উর্ভর মাটির উপরের অংশ) ব্যাপক হারে কেটে নিচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে চাষাবাদের জন্য জমি পাওয়া যাবে না। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কড়া ভাবে নিষেধাজ্ঞা আছে, কৃষি জমির মাটি কেটে অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
এ বিষয়ে মুগসাইর গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে অভিযুক্ত ড্রেজার ব্যবসায়ী সোহেল খান বলেন, আমরা উপজেলা ভূমি অফিস, থানা পুলিশ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও সাংবাদিকদের ফুট হিসেবে ম্যানেজ করেই ড্রেজার চালাই। সাহস থাকলে ড্রেজার ভেঙ্গে দেখুক? সবগোমর ফাঁস করে দেব?
ধামঘর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার বলেন, আমরা সবসময় ড্রেজারের বিপক্ষে। ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রমান করতে পারলে চাকুরী ছেড়ে দেব।
মুরাদনগর থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুলিশ টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে, আরো হবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসরিন সুলতানা নিপা বলেন, ড্রেজারের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। নির্বাচনের এ সময়েও অবৈধ ড্রেজার বন্ধে আমাদের অভিযান চালছে। ভূমি অফিসের নামে কেউ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রমান পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সামাদ শিকদার বলেন, আমি যোগদানের পর বুঝতে পেরেছি এ উপজেলার কিছু মানুষ ড্রেজারপ্রীতি। ড্রেজারমুক্ত করার জন্য নিয়মিত অভিযান চলছে। ড্রেজার ব্যবসায়ীদের দৌড় শুরু হয়ে গেছে।