মানিক দাস //
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার ২০ তম দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্মৃতিচারণ পরিষদের ব্যবস্থাপনায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুষ্ঠিত হয়।
চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা লেঃ (অবঃ) এম এ ওয়াদুদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, গত বিজয় মেলায় আমরা দের বরেন্য মুক্তিযুদ্ধাদের এ মঞ্চে এনে স্মৃতিচারণ করিয়েছি।কিন্তু এবছর সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্হতা থাকায় তারা আসতে পারেনি। বিজয় মেলা এবছর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাঝে করছি। আজকে আমি আমার জীবনের যুদ্ধকালীন সময়ের কিছু স্মৃতিচারন করছি। আপনারা মনোযোগ দিয়ে আমার কথা গুলো শুনেন তাহলে মুক্তিযুদ্ধ সমৃদ্ধি পাবে। আমাদের দেশে অনেক মুক্তিযুদ্ধা জিবিত নেই। হয়তো আগামীতে আমি থাকি কিনা তাই আজকে স্মৃতিচারন করছি। এমনি ভাবে আমাদের চাঁদপুরের অনেক মুক্তিযুদ্ধা নেই। সেনা বাহিনীর প্রধান আঃ আজিজ চাঁদপুরের ছিলেন। গুরুত্ব পূর্ণ পদে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ছিলেন। কোনো দিন এক দিনে কিছু হয়নি। কুড়ে করতে গেলে ও কয়েক দিন লেগে যায়। তেমনি মুক্তিযুদ্ধ একদিনে হয়নি। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে এর সূত্রপাত হয়। মার্চ মাসের ৭ তারিখ রেসকোস ময়দানে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেন তোমাদের যার যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো। আমরা সেদিন ৭১ এর প্রথম প্রহরে আমরা মুক্তিযুদ্ধারা পাকিস্তান শত্রুদের বিরুদ্ধে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি।বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। আর সেই ঘোষণা পত্র পাঠ করে মেজর জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক হতে পারেনা। ৭ এপ্রিল চাঁদপুরের উপর পাকিস্তান বাহিনী বিমান হামলা করে। পুরান বাজারে এক নারী সেদিন জীবন দেয়। আমি একা সেই দিন চাঁদপুরে ছিলাম। চাঁদপুর মহিলা কলেজে আমরা বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় তিন শতাধিক সদস্য মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি।সুবেদার রবসহ মুক্তিযুদ্ধারা সেদিন একত্রিত হই। এখান থেকেই আমরা যুদ্ধ শুরু করি। ৮ এপ্রিল সকাল ৮ টায় পাক বাহিনী চাঁদপুর দখল করে নেয়।জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোস্তাক হত্যা করে দেশকে কলঙ্কিত করেছে। এখনই খন্ডখার অবস্থা কে জিয়াউর রহমান সংসদে সদস্য করেছিল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আকাশের মত উদাসীন। পাকিস্তান কারাগার থেকে ফিরে আসার পরে বঙ্গবন্ধুকে মন্ত্রী পরিষদে মুস্তাককে নিয়েছিলেন নিলেন। নিজামিরা ছিল কলঙ্কিত ব্যক্তি। জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি নিজামীদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতায় এনে তাদের গাড়িতে পতাকা দিয়েছিল।বাংলাদেশ অর্জন করতে গিয়ে কারো জীবন দিয়েছিল। ৩০ লক্ষ মানুষ ও ২ লাখ মা বোন। ৭ এপ্রিল আমার যদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০ নভেম্বর শেষ হয়েছে। দাউদকান্দির গোয়ালমারির যুদ্ধে ছিল আমার শেষ যুদ্ধ। ১২ থেকে ১৪শ মুক্তিযোদ্ধা আমার সাথে সেদিন যুদ্ধ করেছিল। দুপুর ২ টা পর্যন্ত বেশ যুদ্ধ হয়ে গেল। এর মধ্যে আমরা পাকিস্তানি ২০ / ৩০ জনকে খতম করতে সক্ষম হই। শেষ মুহূর্তে আমি গুলিবিদ্ধ হই। ১৬ই ডিসেম্বর সেনা প্রধান নিয়াজি ভারতের সেনা প্রধান ও আত্মসমর্পণ করল। গোয়ালমারির যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাদের কাছে সারেন্ডার করে। শতাধিক পাকিস্তান সেনা নিহত হলো। আমরা ৬ জন সহযুদ্ধাকে হারালাম।
জেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমাণ্ডার মোঃ ইয়াকুব আলী মাস্টারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের প্রজম্ম জেলা পরিষদের মতলব উত্তর, দক্ষিণ ও কচুয়া আসনের সংরক্ষিত সদস্য তাসলিমা আক্তার আখি,কৃষি ব্যাংক চাঁদপুর শাখার সহকারী মহা ব্যবস্হাপক আরশাদ খান,
এসময় মঞ্চে উপস্হিত ছিলেন, জেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদের সাবেক আহ্বায়ক মোঃ সাহাদাত হোসেন সাবু পাটোয়ারী, সাবেক ডেপুটি কমাণ্ডার সিরাজুল ইসলাম বরকন্দাজ, সহকারী কমাণ্ডার মৃণাল কান্তি সাহা, সহকারী কমাণ্ডার আঃ মান্নান।
স্মৃতিচারন শেষে স্মৃতিসংরক্ষণ ১৯৭১ এ যারা আঁকা ছবি প্রদশন করেছে তাদের কে ক্রেস্ট দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। সব শেষে সাংস্কৃতিক পরিষদের ব্যবস্হাপনায় অগ্নিবীণা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।