ক্রাইম এ্যাকশন ডেস্ক
সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ নিভৃতেই জীবন যাপন করছিলেন। নিজের ফ্ল্যাটে উদয়াস্ত সময় কাটতো তার। ধীরপায়ে হাঁটতেন। খবরের কাগজ পড়তেন। মন চাইলে দু-একটি বইয়ের পাতা উল্টে দেখতেন ঝাপসা চোখে। এমনিতেও লোকজনকে খুব একটা দেখা-সাক্ষাৎ দিতেন না। জীবনসায়াহ্নের দিনগুলো এভাবেই কাটিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানিত পদে দায়িত্ব পালন করা মানুষটি দীর্ঘদিন ধরেই লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন। ছোট ছেলে, ছেলেবউ, নাতি আর ব্যক্তিগত সহকারী ছাড়া আর কেউ তার ছায়াটিও দেখতে পায়নি জীবনের শেষ দিনগুলোতে।
গুলশানের গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট কনকর্ডে ছয়তলা ভবনটির দোতলায় থাকতেন সাহাবুদ্দিন আহমদ।
২০১৩ সাল থেকে গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট কনকর্ডে ছোট ছেলে সোহেল আহমদের সঙ্গে বসবাস করছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। সহধর্মিণী আনোয়ারা আহমদ গত ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। সেই থেকে আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন ৯২ বছর বয়সী সাহাবুদ্দীন আহমদ।
দেখা-সাক্ষাতের জন্য খুব একটা কেউ আসতেন না গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্টে। যারা আসতেন, তারা সাবেক রাষ্ট্রপতির দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতেন। আত্মীয়-স্বজনরাও দেখা পেতেন না কখনো-সখনো। তাই এই পথে সাবেক প্রধান বিচারপতির খোঁজে কেউ তেমন আসতেন না।
করোনা মহামারি দেশে আসার আগে দু-একজন মাঝেমধ্যে সকাল-বিকাল আসতেন। কিন্তু করোনার পর কারো ছায়াটি ছিলোনা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধক টিকা নিয়েছেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। সিএমএইচ থেকে একটি মেডিকেল টিম এসে তাকে টিকা দিয়ে গেছে। টিকা নেয়ার পর কোনো সমস্যা হয়নি। বয়সের কারণে কিছু রোগ-শোক ছাড়া এমনিতে সুস্থই ছিলেন তিনি।
ছয়তলা গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট কনকর্ডের ২০টি ফ্ল্যাটের আটটি পেয়েছেন তিনি। বাকি ১২টি কনকর্ডের। নিজের আটটি ফ্ল্যাট ছেলেমেয়েদের ভাগ করে দিয়েছেন। নিজের নামে রেখেছেন একটি। সেটিতেই থাকেন তিনি।
সাবেক এই প্রধান বিচারপতির ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বড় মেয়ে অধ্যাপক ড. সিতারা পারভিন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ওই দুর্ঘটনায় তার দ্বিতীয় মেয়ে শাহানা স্মিথের স্বামী গুরুতর আহত হয়ে পরের বছর মারা যান। শাহানা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রেই রয়েছেন। ছোট মেয়ে সামিয়া পারভীন একজন স্থপতি। তিনি বাস করেন যুক্তরাজ্যে। বড় ছেলে শিবলী আহমদ একজন পরিবেশ প্রকৌশলী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ছিলেন। বর্তমানে দেশেই আছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে পারছেন না।
সব সময়ের জন্য ছায়াসঙ্গী হিসেবে একজন ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদের সঙ্গে। তার সহায়তায় ধীরে ধীরে হাঁটতেন তিনি। কখনো নিজে নিজেই হাঁটতে পারেন।
সাহাবুদ্দীন আহমদ নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তালুকদার রেসাত আহমদ ভূঁইয়া ছিলেন একজন খ্যাতনামা সমাজসেবক।