স্টাফ রিপোর্টার: ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এসব অঞ্চলে শিল্পকারখানায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ও বাড়তি ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে বলে প্রত্যাশ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সাতক্ষীরা জেলায় স্থান নির্বাচন, সরকারি খাসজমি থাকলে তার বিবরণ, জমি অধিগ্রহণ ব্যয়সহ ৯ ধরনের তথ্য চেয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন কর্তৃক অর্থনৈতিক জোন হিসেবে প্রস্তাব প্রেরণসহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এদিকে, সাতক্ষীরার অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্ধারিত সরকারি খাসজমি স্থানীয় কিছু মাদকসেবী ও সন্ত্রাসী বাহিনীর ছত্রছায়ায় জবর-দখলের পায়তারা অব্যাহত রেখেছে মাদকাসক্ত বদরুজ্জামান মামুন ও আসাদুজ্জামান সুমন। অভিযোগ উঠেছে, পলাশপোল মৌজার ৪২৩৮ নং দাগসহ অন্যানা দাগের প্রায় সাড়ে ৩শ বিঘা জমি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তি জবর দখলের পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে মৃত ঈমান আলীর স্ত্রী রহিমা খাতুন ও তার দুই মাদকাসক্ত পুত্র বদরুজ্জামান মামুন ও আসাদুজ্জামান সুমন। মিথ্যা ও প্রতারণামূলকভাবে উক্ত সম্পত্তি (১৫ জুলাই ২০২১ থেকে ১৫ জুলাই ২০২৪ সাল পর্যন্ত) ৩ বছরের জন্য লীজ প্রদান করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে এবং পুনরায় দাবীকৃত অর্থ আদায় করতে না পেরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বদরুজ্জামান মামুন ও আসাদুজ্জামান সুমন। উক্ত সম্পত্তি সরকারি সম্পত্তি দখলের অভিযোগে ইতোপূর্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১ মাসের কারাদন্ড ভোগ করেছেন রহিমা খাতুন। এছাড়া সম্প্রতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক শাফিনুর এর মুরগীর ফার্ম থেকে প্রায় ৬ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি করেছে বদরুজ্জামান মামুন এবং মৎস্য ঘের থেকে বিভিন্ন সময়ে জাল দিয়ে মাছ লুট করে তারা। এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানায় অভিযোগ করা রয়েছে। এসব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে।
সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ জুলাই ২০২২ সাতক্ষীরা সদর ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার বরকুত উল্লাহ সরেজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেন। প্রতিবেদনে সরকারি খাস সম্পত্তি সরকারের দখলে আছে বলে উল্লেখ করেছেন। এরপরেও পুনরায় কিছু উৎশৃঙ্খল কিছু বখাটে ও মাদকসেবীদের ছত্রছায়ায় সরকারের খাস জমি জবর দখলের পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে বদরুজ্জামান মামুন ও আসাদুজ্জামান সুমন। ‘ডোপ টেস্ট’ করলে বদরুজ্জামান মামুন ও আসাদুজ্জামান সুমনের মাদকাসক্তের বিষয়টি প্রমাণিত হবে বলে জানান সচেতন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে সৈয়দ শাফিনুর বলেন, ‘৩ বছর মেয়াদী ঘের/ লেক লীজ নেওয়ার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পুনরায় দাবীকৃত চাঁদার টাকা না দেওয়ায় মাদকাসক্ত বদরুজ্জামান মামুন ও আসাদুজ্জামান সুমন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। সমাজের আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে তারা সাংবাদিকদের কিছু টাকা দিয়ে গত ১৮ জুলাই ২০২২ স্থানীয় একটি পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুরুচিপূর্ণ সংবাদ প্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের প্রকৃত বিষয়টি তুলে ধরার অনুরোধ জানান তিনি।’
এদিকে, সরকারি সম্পত্তি যাতে মাদকাসক্ত বদরুজ্জামান মামুন ও সুমন প্রতারণা ও বখাটে সন্ত্রাসী বাহিনীর ছত্রছায়ায় জবর দখল না করতে পারে সেজন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন সুশীল সমাজ।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ইতোপূর্বে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন কালুর বিরুদ্ধে উক্ত সম্পত্তি নিয়ে মিথ্যা সংবাদ পবিবেশন করে হেয় প্রতিপন্ন এবং একাধিক মামলা করে তাকে হয়রানী করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, কৃষি ও পর্যটনে সমৃদ্ধশালী জেলা সাতক্ষীরা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে উপস্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরাকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে অনুমোদন দিয়েছেন। ফলে উপকূলীয় এ জেলার বাসিন্দারা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে শহরের খড়িবিলা এলাকায় প্রায় ১৫০ একর জমি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য স্থান নির্ধারণ করেছে জেলা প্রশাসন। এতে একদিকে যেমন গড়ে উঠবে নতুন কলকারখানাসহ নানা অবকাঠামো, তেমনি কর্মসংস্থান হবে হাজার হাজার শিক্ষিত বেকারের-এমন প্রত্যাশায় এখন সাতক্ষীরার মানুষ। সাতক্ষীরার সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য গত জানুয়ারিতে জেলা প্রশাসক হুমায়ন কবির একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রিপরিষদে পাঠান। মন্ত্রিপরিষদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করলে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি অনুমোদন করেন।