আলমাস হোসেনঃ ঢাকা জেলা প্রতিনিধি
বিদেশী কোম্পানির গোডাউন থেকে ওয়াসার মিটার ডাকাতির ঘটনায় মূলহোতাসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার (২০ মে) দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশশিরা হাবিব খান। এর আগে, শুক্রবার (১৯ মে) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে সাভার মডেল থানাধীন হেমায়েতপুর এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানাধীন চাইরা এলাকার মৃত আলেকচানের ছেলে ও ডাকাতির মূলহোতা মো. আলামিন (২১) এবং অপরজন একই এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে মো. আলামিন হোসেন ওরফে ভেকু আলামিন (২০)।
ডিবি পুলিশ জানায়, মূল্যবান হওয়ায় কোম্পানির নিরাপত্তা কর্মী আলামীন এসব মিটার লুটের পরিকল্পনা করে। পরে লুটের জন্য আরও ৮ জন সদস্য জোগাড় করে আলামীন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সাভারের ভরারি বটতলা এলাকায় মিটারের গোডাউনে ডাকাতি করতে যায় তারা। পরে গোডাউনের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীদের বেঁধে ৩ হাজার ৮৭৪ পিস মিটার লুট করে নিয়ে যায় এবং এসব মিটার ভেঙে ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করে দেয় ডাকাত চক্রটি।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশশিরা হাবিব খান বলেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারী সাভারের ভরারী বটতলা এলাকায় জামিয়া আবু ইউসুফ এতিমখানা ও মাদ্রাসার পূর্ব পাশে অবস্থিত CHINA FAST METALLURGICAL GROUP COMPANY LTD কোম্পানীর একটি ডিপো থেকে অজ্ঞাতনামা ডাকাত সদস্যরা ঢাকা ওয়াসার ৩ হাজার ৮৭৪ পিস পানির মিটার, ডিপোতে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক এবং ডিভিআর লুট করে নিয়ে যায়। যার বাজারমূল্য আনুমানিক ১ কোটি ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯৫ টাকা। পরবর্তীতে এ ঘটনায় কারখানার সিকিউরিটি কমান্ডার মো. আহসান হাবিব বাদি হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২৪)।
মোবাশশিরা হাবিব খান আরও বলেন, পরবর্তীতে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান দ্রুত উক্ত মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) কে নির্দেশ প্রদান করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উক্ত মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য কাজ শুরু করেন। তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি চৌকস দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা জেলা ও রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৬ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যমতে মামলার ঘটনায় লুণ্ঠিত ১ হাজার ১৬৮ পিস পানির মিটার ও ৩২৩ পিস পানির মিটার রাখার পিতলের পাত্র উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া আসামি নুর ইসলামের কাছ থেকে মালামাল বিক্রির নগদ ৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আসামীদের কাছ থেকে লুন্ঠনের কাজে ব্যবহৃত একটি হায়েস মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, পরবর্তীতে উক্ত আসামীদের দেয়া তথ্যমতে মামলার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক ও ট্রাক চালককে এক কার্টুন (১০টি লুন্ঠিত পানির মিটার) সহ গ্রেপ্তার করা হয় এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাকাতির ঘটনার মূলহোতা নিরাপত্তা কর্মী মো. আলামিন (২১) ও মো. আলামিন হোসেন (২০) কে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে সাভার মডেল থানাধীন আমিনবাজার হিজলাপাড়া এলাকার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উত্তর পার্শ্বে মৃত সাহাবুদ্দিন চেয়ারম্যানের বাড়ীর নিচ তলার পূর্ব-পশ্চিম পাশের রাস্তা সংলগ্ন কক্ষ থেকে লুণ্ঠিত ১৫৫ কার্টুন, প্রতি কার্টুনে ১০ পিস করে সর্বমোট ১৫৫০ পিস ওয়াসার পানির মিটার উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা।
এ ঘটনায় অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধার ও অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান গোয়েন্দা পুলিশের এই চৌকস কর্মকর্তা।