ডেক্স রিপোর্ট: তার এক হাত পুরো নেই আবার অন্য হাতও কনুই পর্যন্ত। কিন্তু সেই ইচ্ছাশক্তির জোরে বর্তমানে সে রাঙ্গুনিয়া কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হাবিবুর।
অদম্য এ তরুণ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজা নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান। প্রতিদিন সে বাড়ি থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে কলেজে যায় ।
জানা যায়, হাবিবের বয়স যখন পাঁচ বছর তখন সে খাগড়াছড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পথে রাঙামাটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর একটি হাত সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ও অন্যটি থেঁতলে যায়। বাবা মোহাম্মদ রমজান আলী অটোরিকশা চালান। তিনি বলেন, আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হলেও কখনো দমে যায়নি। আমরা তার পড়ালেখার খরচ দিতে না পারলেও তার মেধার কারণে সবার সহযোগিতায় সে তার পড়ালেখা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে।
হাবিবুরের মা রাশেদা বেগমের বলেন, তার দুই হাত না থাকলেও ছোটবেলা থেকে সে সবকিছু নিজে করার চেষ্টা করত। প্রথম প্রথম সে নিজে জামাকাপড় পরতে পারত না, বই-খাতা নিতে পারত না। সবকিছু করতে তাকে সাহায্য করতে হতো। কিন্তু তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও অদম্য আগ্রহ তাকে এত দূর নিয়ে এসেছে। অন্য সব স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের মতো সে-ও নিয়মিত কলেজে যায়, মোবাইল চালায়, কম্পিউটার ব্যবহার করে, নিজ হাতে লেখাপড়া, নিজ হাতে খাওয়া, এমনকি খেলাধূলা ও সে নৈপুণ্য দেখায়। হাবিব উচ্চশিক্ষিত হতে চায়। হাবিব বলে, মা-বাবা ও সবার আন্তরিক সহযোগিতায় সে এত দূর এসেছে। কারও বোঝা হয়ে না থেকে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। ভবিষ্যতে সে একজন দক্ষ প্রকৌশলী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তার কলেজের অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ বলেন, হাবিব এসএসসিতে ৪.৮৬ পেয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছিল। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং জেএসসি পরীক্ষায় ৪.৬৭ পায়। তাকে উপবৃত্তিসহ সব সুযোগ-সুবিধা কলেজ কর্তৃপক্ষ দেবে।
বেসরকারি সংস্থা উইমেন ইম্পাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড চাইল্ড রাইটসের (অ্যাওয়াক) সমন্বয়কারী সমীর বড়ুয়া বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তাঁকে শিক্ষা উপকরণসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করে আসছে। ভবিষ্যতেও তাঁর সঙ্গে অ্যাওয়াক থাকবে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, ছেলেটি খুব মেধাবী এবং নিজ হাতে সব করে চেষ্ঠা করে। আমি যেকোনো প্রয়োজনে তাকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি।