মানিক দাস //
জাটকা এবং মা ইলিশের পাশে, আমরা আছি প্রতিটি নিঃশ্বাসে” এ শ্লোগানকে হৃদয়ে ধারন করে চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠনের এ বছর ১৫ তম জাতীয় ইলিশ উৎসবের তৃতীয় দিন বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে অতিবাহিত হয়েছে।
১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম।
তিনি বলেন, ইলিশ নদী আর সাগরে বসবাস। তাদের খাবার দিতে হয় না। তারপর ও দাম বেশি। সার্বিক ভাবে দেখভালের দায়িত্ব সরকার দিয়েছে মৎস্য ও প্রণী সম্পদ বিভাগ কে। আমরা শুধু আইন প্রয়োগ করার কাজ করে থাকি। আমি ভোলার পুলিশ সুপার ছিলাম, সেখানে ও ইলিশের দাম বেশি। চাঁদপুরে এসে দেখি এখানে ইলিশের দাম আরো বেশি। চাঁদপুরে এনে বিক্রি কররে কেজি প্রতি ২ শ টাকা বেশি পায় জেলেরা। এ বছর নাকি ইলিশের আকাল চলছে। বিশ্বের ১২ টি তেশে ইলিশ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়লে ও বিশ্বের বাকী দেশ গুলোতে তা কমছে। ইলিশ ডিম পারার সময় নদীতে আসে। আগে নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত। এখন কেন তা পাওয়া যায়না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সমুদ্র থেকে নদীর যে মোহনা সেখানে ও পরিবর্তন এসেছে। নদীতে ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলছে তার কারণে ও নদীতে ইলিশ কমে যাচ্ছে। চাঁদপুর থেকে যারা ইলিশ কিনছে তারা চাঁদপুরের ইলিশের স্বাদ পাচ্ছে না। অন লাইনে ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে। তাতে চাঁদপুর যে জন্য ব্র্যান্ডিং তার সুনাম নষ্ট হচ্ছে, আমরা চাঁদপুরের ব্র্যান্ডিং যাতে নষ্ট৷ না হতে পারে সেজন্য কাজ করবো। মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে জেলেরা যাতে মাছ না ধরে সরকার সেই চেষ্টা করছে। আমরা যদি জেলে নৌকা গুলোতে জিপিএস লেখা থাকে তাহলে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব।
সুদিপ্ত রায় বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় সচেতনার বিকল্প নেই। জেলা পুলিশ মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কঠোর অবস্হানে রয়েছে। জেলা ট্রাক্সফোর্স কমিটি রয়েছে, তারা সব সময় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযানের সময় নৌকা গুলো প্রসাশনের আওয়তায় আনা গেলে মৎস্য সম্পদ রক্ষা সম্ভব হবে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, চতুরঙ্গের ৪০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এ দিনে ১৫ তম ইলিশ উৎসব করছি। ইলিশ উৎসব নয়? এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। নদী দূষণ আর নাব্যতার কারণে নদীতে ইলিশ নেই। আগের মতো চাঁদপুরে ইলিশের প্রাচুর্য নেই। ইলিশের আকাল চলছে। নদীর নাব্যতা ও দূষণ মুক্ত করতে পাররে হয়তো চাঁদপুরের নদীতে ইলিশের পূর্বের রূপ ফিরে আসতে পারে। মা রইল রক্ষার অভিযান চলাকালে পুরান বাজারের একাধিক স্হানে ইলিশ বিক্রি করা হয়ে থাকে। তারা আইনের তোয়াক্কা না করে অভিযানের সময় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিধন করে। ইলিশ স্রোতের দিকে চলা চল করে। চাঁদপুর, লক্ষিপুর, ভোলা এসব অঞ্চলে বেশি বিচরন করে থাকে।এ সময় বেশির ভাগ জেলে মৌসুমী জেলে। অভিযান চলাকালে এ সব জেলে ধরা পরলে জেলে প্রতিনিধিরা তাদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করে। অভিযানের সময় নিবন্ধিত জেলেদের সম্পৃক্ত করা গেলে আমরা উপকার পেতে পারি। জেলেদের আটক করা হয়, কারেন্ট জাল পুরিয়ে দেয়া হয়। আজ পর্যন্ত কোনো কারেন্ট জাল উৎপাদনকারী কাউকে জেল জরিমানা করা হয়না। যদি করা হতো তাহলে জেলেরা আর কারেন্ট জাল ব্যবহার করতো না। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ইলিশ নদীতে ডিম ছারতে আসে। এ সময় আভিযান অব্যহত রাকা হয়। শুধু তাই নয় ২২ দিনের জাটকা রক্ষায় ও প্রশাসন নদীতে কঠোর অভিযান চালিয়ে যায়।
আলোচকের বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদিপ্ত রায়।কোস্টগার্ড চাঁদপুরের জসীম উদ্দীন।আলোচকের বক্তব্য রাখেন মৎস্যজীবী প্রতিনিধি শাহ আলম মল্লিক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাডঃ ইয়াছিন আরাফাত ইকরাম।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ বিণয় ভূষণ মজুমদার ও। ইলিশ উৎসবের রূপকার হারুন আল রশিদের সঞ্চালনায় সভাপ্রধান ছিলেন ইলিশ উৎসবের আহবায়ক রোটাঃ কাজী শাহাদাত
বিকালে প্রদর্শনি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কে অংশ গ্রহন করে পক্ষ দল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ বাবুরহাট শাখা ও বিপক্ষ দল বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজ। সভাপ্রধান ছিলেন চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউণ্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি রোটাঃ কাজী শাহাদাত।
নৃত্যপরিবেশ করে চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠনের নৃত্য বিভাগের নৃত্য শিল্পীরা।চাঁদপুর নৃত্যধারার ও খাগড়াছড়ির ককবরক ডান্স একাডেমির নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। তারপর সাধনা সরকার অনুর সংগীত ও সব শেষে পুনম মিত্র ও বিপাশা ধর বীণার সংগীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চতুর্থ দিনের ইলিশ উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। তাছাড়া আরো সংগীত পরিবেশন করে ও যন্ত্র সংযোগে ছিল শুভ্র রক্ষিত, রাজীব চৌধুরী, মুন্না ঘোষ, প্লাবন ভট্টাচার্য্য, এমএইচ বাতেন সহ শিল্পীরা।