মানিক দাস :
চাঁদপুরে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি পরিচিতি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ বন গভেষনা ইনস্টিটিউট বিএফআরআই চট্টগ্রামের আয়োজনে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান।
এ সময় তিনি বলেন, আমাদের এই কর্মশালায় ফার্নিচার ও কাঠ ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করায় কর্মশালার মান আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনিভাবে প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজন এভাবে কর্মশালায় সম্পৃক্ত করলে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মান আরও বৃদ্ধি পাবে। আমি বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেছি। সেখানে যে সমস্ত কর্মকা- পরিচালিত হয় তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সেখানে অনেক কিছুই রয়েছে। একটি জাতি হিসেবে গড়ে উঠার জন্য যে অর্জন তা দ্রুত এ ইনস্টিটিউট করে যাচ্ছে।
এই ইনস্টিটিউট এর ল্যাব প্রান্তিক পর্যায়ে বন বিভাগের তথ্য পৌছে দিচ্ছে। এই ইনস্টিটিউট ল্যাবের মাটির সাথে সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে যে সব কর্মকর্তা রয়েছেন তারা বন গবেষনা ইনস্টিটিউট এর ল্যাবকে নতুনভাবে জীবন দিয়েছেন। এই ইনস্টিটিউটটি প্রাণ সঞ্চার করছে। যদি কেউ এ ধরনের বড় উদ্যোগ নিতে চান তাহলে শুরুতেই সরকারের কাছে কিছু চাওয়া ঠিক নয়। আগে উদ্ভাবন শুরু করুন, তারপর সরকারের কাছে আমরা যে কিছু চাইতে পারব। বর্তমান সরকার এই ধরনের কাজের জন্য বড় ধরনের ঋণ দিচ্ছে। আমি চেস্টা করব আপনাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য। উদ্ভাবিত প্রযুক্তির পরিচিতি বিষয়ক কর্মশালায় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।
এর মধ্যে বনজ হিসেবে বাঁশের অনেক চাহিদাও রয়েছে। বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় গাছপালা ও ভূমির পরিমাণ অনেক কম। জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে দিন দিন বন ধ্বংষ হচ্ছে। তাই দ্রুত বর্ধনশীল বৃক্ষ এবং বাঁশ দ্বারা বনায়ন করা প্রয়োজন। একটি বাঁশ ঝাড় থেকে মাত্র ৩/৪ বছরে পরিপক্ষ বাঁশ পাওয়া যায়। সেখানে একটি পরিপক্ষ গাছ পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয় ২০ থেকে ২৫ বছর। তাই কাঠের বিকল্প হিসেবে বাঁশের পণ্য তৈরি এবং ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে বনভূমি ধ্বংস কমিয়ে আনা সম্ভব।
বাঁশের বিভিন্ন পণ্য তৈরির পর প্রাপ্ত খেলনা ও অব্যবহৃত অংশ দ্বারা পার্টিকেল বোর্ড তৈরি করা হয়। বোর্ডের উপর বাঁশের চাটাইয়ের আশ্চাধন ব্যবহার করলে বোর্ড মজবুত হয় এবং আকর্ষণীয় দেখায়। ফসলী জমির আইলের গাছ জমির শীতল রাখবে এবং মাটির জৈব পদার্থের ঊর্বরতা এবং কৃষি শ্রমিকের কর্ম ক্ষমতা বাড়াবে। জমি আইলের বৃক্ষ লো হাওয়া থেকে ভূমি এবং ফসল বিনষ্ট হওয়া হ্রাস করবে। সঠিকভাবে ঢালপালা ও শিকড় চাটাই করে রাখলে ক্ষেতের আইলে বৃক্ষ ফসলের ক্ষতি করে না। বরং পোকা মাকড় বুঝি পাখির আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করবে। দ্রুত বর্ধনশীল বহুবিদ ব্যবহার উপযোগী কম শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট বৃক্ষ নির্বাচন করা উচিত। ক্ষুদ্র সরু, নরম, খাড়া ও সহজে পচনশীল পাতা বিশিষ্ট বৃক্ষ ফসলী জমির আইলের জন্য অগ্রাধিকার যোগ্য। সিমেন্ট বন্ডেড পার্টিকেল বোর্ড কাঠের তৈরি পার্টিকেল বোর্ডের ন্যায় এক প্রকার বোর্ড। কাঠের বা বাঁশের কুচির সাথে পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট মিশিয়ে চাপ প্রয়োগ করে এই বোর্ড তৈরি করা হয়। এটি গৃহ নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে উপযোগী। ঘরের দেয়াল দরজা এবং সিলিং তৈরিতে এই বোর্ড ব্যবহার করা যায়। টেকসই, পানি রোধ এবং অগ্নিরোধক। এই বোর্ড সহজেই করাত দিয়ে কাঠের ন্যায় কাটা ছিদ্র করা এবং প্যারেক ও স্ক্রু ঢুকানো যায়।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন ড. ডেইজি বিশ্বাস, জেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ, চাঁদপুর সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ তাজুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডাঃ সাইদুজ্জামান, চাঁদপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কামরুল হাসান, প্রেসক্লাব সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক লক্ষন চন্দ্র সূত্রধর, সাবেক সভাপতি ইকরাম চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন মিলন, এনএসআই ডিডি ফারুক আহমেদ, চাঁদপুর উত্তর ফায়ার স্টেশনের পরিচালক ফরিদ আহমেদ মনির, এনজিও ফোরামের রাজ্জাকুল হায়দার, ফার্নিচার মালিক সমিতির সভাপতি শাহআলমগীর, চাঁদপুর কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধঅরণ সম্পাদক শেখ মোঃ আলমগীর প্রমুখ। এ কর্মশালায় চাঁদপুর জেলা বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বিআরডিবি, সমবায় অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, জেলা তথ্য অধিদপ্তর, স্থাণীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি, কাঠ ব্যবসায়ী, নার্সারি, করাত কল ও ফার্নিচার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শরীফ চৌধুরী, বিএম হান্নান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, জিএম শাহীন, সোহেল রুশদী, জেলা তথ্য কর্মকর্তা নুরুল হক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাহাবুদ্দিন সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।