মানিক দাস ॥ চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা ১২ জুন বুধবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের পরিচালনায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের দেশে বড় সমস্যা হলো সড়ক দূর্ঘটনা। গত ১১ জুন একটি সড়ক দূর্ঘটনা চাঁদপুরে হয়েছে। একটি শিশুকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি। আমি নিজে হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ডাক্তার ও সেবকদের সাথে চিৎকার চেচামেচি করে রোগীদের চিকিৎসা করিয়েছি। শিশুটিকে ঢাকা পাঠানো হলো পথিমধ্যে সে মারা যায়। চোখে পানি আসলেও কিছুই করার ছিল না। অপর আহতকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে হয়তো সে মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় বেঁচে যাবে। আমরা যে যেখানে বসে আছি সবাই দায়িত্বশীল পদে আছি। আমরা কোথায়ও যেতে হলে নিরাপদ সড়ক চলতে হবে। এ ব্যাপারে আমি শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বসব। আমরাও আমাদের সন্তানরা যেভাবে সড়কে ঝড়ে যাচ্ছে তা থেকে কীভাবে বর্তমান সমস্যা সমাধান করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করব।
সিএনজি স্কুটারের দক্ষ ড্রাইভার তৈরি করতে হবে। মটর চালিত রিক্সা শহরে বন্ধ করতে হবে। দক্ষ সিএনজি চালকদের লাইসেন্স প্রদান করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ী না চালানোর জন্য সিএনজি চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। একই সাথে সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। আঞ্চলিক মহাসড়কে যেন কোনভাবে সিএনজি চলতে না দেওয়া হয় তাহলে দূর্ঘটনারোধ করা সম্ভব হবে। প্রতিটি ছোট গাড়ীর ডান পাশের অংশ বন্ধ করে দিতে হবে। যাতে করে কোন যাত্রী ডান পাশ দিয়ে নেমে দূর্ঘটনায় পতিত না হয়। রাস্তায় গাড়ী চলাচলের সময় যাত্রী উঠানামার বিষয়টি নির্দিষ্ট স্থান তৈরি করে দিতে হবে।
১০ বছরের উপরে যেসব সিএনজি সড়কে চলাচল করছে ওইসব সিএনজি বাতিল করে দেওয়া প্রয়োজন। হাজীগঞ্জ বাজারে ও চৌরাস্তার মোড়ে বাইপাস সড়ক তৈরি করা হলে এই স্থানে জানযট নিরসন করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, চাঁদপুর শহরের ইলিশ চত্বর থেকে বাবুরহাট পর্যন্ত রাস্তার উপরে প্লাস্টিকের ডিভাইডার বসানো হবে। আমরা পূর্বেও বলেছিলাম প্রতিটি বড় গাড়ীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য। যদি গাড়ীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হতো তাহলে ঘোষের হাটে যে দূর্ঘটনাটি ঘটেছে তা আমরা ওই ফুটেজ থেকে কার দোষ ছিল তা সনাক্ত করতে পারতাম। যুব উন্নয়নের মাধ্যমে চাঁদপুরে ৩ হাজার ২শ লোক ন্যাশনাল সার্ভিস নামে কাজ করছে। কিন্তু এদেরকে যে যে স্থানে দেওয়াহয়েছে তারা ঠিকভাবে সেইসব স্থানে কাজ করছে না। ট্রাফিক ও বিআরডিতে ন্যাশনাল সার্ভিস থেকে ২শ কর্মী দিতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে তারা এই দুইটি স্থানে সার্ভিস দিতে হবে।
যদি তারা কাজ না করে তাদের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার জন্য নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারা সড়কের পাশে গাছ কাটছে এবং কীভাবে কাটছে তার জবাব চেয়েছেন বন বিভাগের কমকর্তাদের কাছে। ইতিমধ্যে ৭শ ৭২টি গাছ রাস্তা প্রশস্ত করনের টেন্ডার দেওয়া হয়েছে বলে বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানান। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মাদকমুক্ত অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা ও ইউনিয়নে এই অ্যাপস তৈরি করে মাদক মুক্ত করার লক্ষ্যে মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের তথ্য জেলা প্রশাসকের অ্যাপসে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরাণবাজার ১নং খেয়াঘাটে অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানপাট উচ্ছদের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চাঁদপুর পিডিবি’র মাধ্যমে অনুরোধ করা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ বিভাগ, চাঁদপুর পৌর পাঠাগার ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এটি দুঃখজনক। পৌর পাঠাগারে শিক্ষার্থীরা বিকেল হলে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞানার্জনের বই পড়ে থাকে। অপরদিকে চাঁদপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে থেকেই লেখাপড়া করছে।
বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করায় এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণদ্বার ব্যক্তিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর শহরবাসী ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের জন্যে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ বিষয়টি সমাধান হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলবো। কারণ সরকার জনগণকে সহজে সেবা দিতে বদ্ধ পরিকর। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সেবার মানসিকতার পরিবর্তন এসেছে। তাই যার যার অবস্থান থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদোন্নতি প্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার আলহাজ্ব মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এমএ ওয়াদুদু, স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী প্রমুখ।
উম্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল হক লিপন, সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, মতলব দক্ষিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত শারমিন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আফরোজ, শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মখর্থা শিরিন আক্তার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাঁদপুরের উপ-পরিচালক খলিলুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর মোঃ মজিবুর রহমান, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, অ্যাাড. সাইফুদ্দিন বাবু, চাঁদপুর উত্তর ফায়ার স্টেশনের পরিচালক ফরিদ আহমেদ মনির, অ্যাড. রনজিত রায় চৌধুরী, এনএসআই সহকারী পরিচালক কৌশিক আহমেদ, শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ উল্লাহ চৌধুরী, মতলব দক্ষিন উপজেলা চেয়ারম্যান এ.এইচ.এম গিয়াসউদ্দিন, শাহরাস্তি পৌর মেয়র হাজী আব্দুল লতিফ, চঁঅদপুর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু তাহের খান, কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।