এবার মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনেরও রয়েছে কঠোর নজরদারি
এমকে মানিক পাঠান
ঈদকে সামনে রেখে আজ রোববার থেকে বাড়ির উদ্দেশ্য ঘরমুখো যাত্রীদের চলাচলে ভীড় পড়বে। আর এ সুযোগে বিশেষ করে রাতে কিংবা ভোর রাতে চাঁদপুর- ফরিদগঞ্জ সড়কে চলাচল কারী ৩টি জেলার যাত্রীদেরকে একরকম জিম্মি করে সিএনজি অটোরিকসার অসাধু চালকরা যাত্রী ভাড়া দ্বিগুন কিংবা তিনগুন আদায়ের এক মহোৎসব চলতে দেখা গেছে বিগত বছরের প্রতিটি ঈদের সময়। এতে করে অল্প আয়ের মানুষের বিপাকে পড়া ছাড়াও নানা ভোগান্তি বাড়ে। এই ভোগান্তি বন্ধ করতে চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে এবার সার্বক্ষনিক ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী উঠেছে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে।
তবে এবার সরকারি প্রশাসন চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট থেকে ফরিদগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত সর্ব্বোচ্চ ১০০ টাকা এবং রায়পুর বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত সর্ব্বোচ ১৫০ টাকা নির্ধারন করে দিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সিএনজি অটোরিকসায় চলাচল কারী প্রতিযাত্রী থেকে সরকারি প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত ওই ভাড়া আদায়ের বাহিরে কেউ যাত্রীকে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে দায়ী চালকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঈদের সময় চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে লঞ্চ ভিড়লেই সিএনজি অটোরিকসার যাত্রী ভাড়া দ্বিগুন কিংবা তিনগুন বেড়ে যায়। ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের একরকম মহোৎসব চলে। মাত্র ২০ কিঃমিঃ যাতায়াতের জন্য নির্ধারিত ৫০ টাকার ভাড়ার স্থলে তা বেড়ে ১০০ /২০০ কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে ৩০০ টাকাও হয়ে যায়। আর এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের হয় বেশির ভাগ রাতের লঞ্চে আসা যাত্রীদের কাছ থেকেই।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় থেকে পরিত্রান পেতে অন্তত আজ থেকে আগামী ১৫দিন সরকারি ভাবে দিনে রাতে ভ্রাম্যমান আদালত বসানো ছাড়া কোন ক্রমে সিএনজি অটোরিকসার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আর কোন বিকল্প পথ নেই বলে ভুক্তভোগী যাত্রীরা মনে করছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ করে ঢাকা থেকে নদী পথে লঞ্চে করে যাতায়াত চাঁদপুর হয়ে নিরাপদ ও আরামদায়ক হওয়ার সুবাদে চাঁদপুর, লক্ষীপুর ও নোয়াখালী এই তিন জেলা মানুষের চলাচল নৌপথে বেশী হয়। আর এই সুবিধা হিসেবে তিন জেলার লোকজন ঢাকা থেকে লঞ্চে দিনে ও রাতে রওনা হন বাড়ির উদ্দেশ্য্ ।
লঞ্চের ডেকে বসে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে নূন্যতম ১০০ টাকায় ভাড়ায় চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে পৌছার পর বাকী পথ যেতে হয় সিএনজি অটোরিকসায়। ঢাকা থেকে নৌপথে প্রায় ৬০ কিঃমিঃ দুরুত্ব পাড়ি দিতে লঞ্চে ১০০ টাকায় চাঁদপুর আসতে পারে। কিন্তু চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট থেকে ফরিদগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ২০ কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিতে সিএনজি অটোরিকসার পূর্ব নির্ধারিত ভাড়া ৫০ টাকার স্থুলে ১০০ টাকা থেকে ২০০ কিংবা ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায়ের অহরহ অভিযোগ রয়েছে। এতে করে সাধারন যাত্রীরা তাদের বাড়ি পৌছতে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে গিয়ে বিশেষ করে অল্প আয়ের মানুষেরা নানা দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। হয়রানী কিংবা মানসম্মান রক্ষার স্বার্থে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।
ভুক্তভোগী কয়জন যাত্রী জানায়, প্রতিদিনই উক্ত সড়কে শতশত সিএনজি অটোরিকসা চলাচল করছে। প্রতিবছরই ঈদকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর – ফরিদগঞ্জ সড়কে সিএনজি অটোরিকসার মালিক ও চালকরা গোপন সিন্ডিকেট করে দ্বিগুন কিংবা তিনগুন ভাড়া আদায় করেই যাচ্ছে। এই সড়কে চলাচল করা এমন অনেক অসহায় ও হতদরিদ্র যাত্রী আছেন যারা যাত্রা পথে তার ভাড়া সহ যাবতীয় খরচ নির্ধারন করেই বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হন। কিন্তু লঞ্চ থেকে নামার পর এ পথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ফলে বিশেষ করে অল্প আয়ের মানুষদেরকে বিপাকে পড়তে হয়।
তবে একটি সুত্র অবশ্য জানিয়েছে, প্রতিটি সিএনজি অটোরিকসা থেকে বিভিন্ন ভাবে মাসিক মাসোয়ারা হিসেবে নানাহ চাঁদা দিতে হয় তাদেরকে। আর আদায়কৃত ওই চাঁদার ভাগ গোপনে চলে যায় বিভিন্ন হাতে হাতে। যে কারনে এই সড়কে দোর্দন্ড প্রতাপে বিশেষ করে ঈদে ঘরমুখো নারী পুরুষ যাত্রীর কাছ থেকে সিএনজি অটোরিকসায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় সহজ লব্য হয়ে গেছে। প্রতি বছরই ঈদের আগে ৪/৫ দিন আগ থেকে এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলে।
আবার ঈদের পরের দিন থেকে উক্ত সড়কেই টানা প্রায় ১০দিন পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়ার আদায়ের মহোৎসব চলে। গত বছর অবশ্য ঈদের পরের কয়েকদিন ফরিদগঞ্জের সরকারি প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রতিরোধ করতে ফরিদগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ডে ভ্রাম্যমান আদালত বসানো হয়েছিল। সেই সময় এ ভ্রাম্যমান আদালত দেখে জনমনে স্বস্তিও দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে উক্ত সড়কে শুধু মাত্র চাঁদপুর সেতুর টোল ও পৌরসভার ট্যাক্সের টাকা আদায় ছাড়া যানবাহন থেকে সকল অবৈধ চাঁদা আদায় বন্ধ করতে বাধ্য করেছেন ফরিদগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রকিব। এই অর্থে এখন আর চালকরা অবৈধ চাঁদা দেয়ার অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও কোন সুযোগও নেই।
এ নিয়ে সিএনজি অটোরিকসার কয়জন চালক তাদের খোড়া যুক্তি দেখিয়ে জানায়, ঈদের সময় একপথেই যাত্রীর চলাচল বেশী। অর্থাৎ যেমন চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে ফরিদগঞ্জে যাওয়ার পর আসার সময় খালি আসতে হয়। আর এ জন্যই বিশেষ করে ঈদের সময় ভাড়া বেশী নিতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ৫০ টাকার স্থুলে ১০০ টাকা ভাড়া আদায় না করে ২০০ কিংবা ৩০০ টাকা আদায়ের কারন কি ? এমন প্রশের কোন সদুত্তর পাওয়া যায় না কোন চালকের কাছ থেকেই। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়জন চালক জানায়, এবার সরকারি প্রশাসন চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট থেকে ফরিদগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত যাত্রী প্রতি ১০০ টাকা ও পাশবর্তী লক্ষীপুর জেলার রায়পুর বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত ১৫০ টাকা নির্ধারন করে দিয়েছে। এবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে দায়ী চালকের জেল সহ বিভিন্ন জরিমানা ্আদায় করতে সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ ঘন্টাই ভ্রাম্যমান আদালত বসানো ছাড়া গোয়েন্দা বিভাগের কঠোর নজরদারী রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে ।
চাঁদপুর জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জিহাদুল কবিরের নির্দেশে ফরিদগঞ্জে সকল যানবাহন থেকে সকল প্রকার চাঁদা আদায়ের নির্দেশ পেয়ে তাৎক্ষনিক ফরিদগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রকিব উক্ত চাঁদা আদায় বন্ধ করতে বাধ্য করেন। সে মতে এবার আর আগের মত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হবে না বলে অনেকেই আশাবাদি হলেও তবে পূর্বের ন্যায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে কিনা তা দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকদিন।
এ নিয়ে ফরিদগঞ্জের ইউএনও আলী আফরোজ গতকাল শনিবার এ প্রতিনিধিকে বলেন, শুধু মাত্র ঈদের সময় কয়দিন চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট থেকে ফরিদগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ভাড়া আদায়ের জন্য সিএনজি অটোরিকসার মালিক ও চালকদের সাথে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, যাত্রীদেরকে জিম্মী করে যাতে করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে সে জন্য জনস্বার্থে সরকারি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলেই সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি হুশিয়ার করে দেন।