মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া- সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে এক প্রবাসীর স্ত্রী হয়েছেন ৪ মাসের অন্তঃসত্বা। তাই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে বাবার বাড়িতে। একদিকে সমালোচনা ও অন্যদিকে অনগাত সন্তানের ভবিষ্যৎ। এনিয়ে ওই গৃহবধু পড়েছেন মহাবিপদে। তাই থানায় দায়ের করেছেন মামলা। তিনি চান তার অনাগত সন্তানের পিতৃ পরিচয়। এবং ফিরে পেতে চান সমাজিক মর্যাদা। আর এই ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী কালা মিয়ার বড় ছেলে হানিফ মিয়ার সাথে পাশের উত্তর বড়দল ইউনিয়নের আমবাড়ি গ্রামের কৃষক আলাল মিয়ার মেয়ে খালেদা বেগমের প্রায় ১০বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের রয়েছে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। কিন্তু কাজের সুবাদে স্ত্রী ও সন্তান রেখে প্রায় ৭বছর আগে সৌদি আরবে চলে যান স্বামী হানিফ মিয়া। এমতাবস্থায় স্বামীর অনুপস্থিতে স্ত্রী খালেদা বেগম হয়ে পড়েছেন ৪ মাসের অন্তঃসত্বা। এজন্য স্থানীয়রা মেঝো দেবর আশিক মিয়া ও ছোট দেবর আকাশ মিয়াকে দায়ী করেন। আর এই বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর থেকে ওই গৃহবধুর ওপর শুরু হয় নির্যাতন। পরে গন্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগীতায় অন্তঃসত্বা গৃহবধু তার বাবার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আর এই ঘটনাটি থানায় জানালে শ^শুর কালা মিয়া, দেবর আশিক মিয়া ও আকাশ মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয় বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পে। কিন্তু আন্তঃসত্বা গৃহবধুর জবানবন্ধিতে পাল্টে যায় চিত্র। ছেড়ে দেওয়া হয় শ^শুর ও ২ দেবরকে। এরপর গত ১৬জুন (শুক্রবার) রাতে উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতলা-চরগাঁও গ্রামের নুর মিয়ার ছেলে গরু ব্যবসায়ী কালা মিয়া (৩৫) কে আসামী করে থানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে-মামলা নং-৮ দায়ের করেন গৃহবধু খালেদা বেগম।
মামলা সূত্রে জানা যায়- গৃহবধুর শ^শুর কালা মিয়া ও লম্পট কালা মিয়া দুজনই গরুর ব্যবসা করেন। সেই সুবাধে তাদের বাড়িতে আসা যাওয়ার সময় কু-প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করতো ৩ সন্তানের জনক লম্পট কালা মিয়া। আর এই বিষয়টি শ^াশুরী রেজিয়া বেগমকে জানালে তিনি কালা মিয়াকে কিছু না বলে উল্টো গৃহবধু খালেদা বেগমকে গালিগালাজ করতো। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারী রাত অনুমান ১টায় ঘরের দরজা খুলে ওই গৃহবধুর মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক শারীকিক সম্পর্ক করে। এর ফলে সে অন্তঃসত্বা হয়েপড়ে। আর এই বিষয়টি গত ৯জুন (শুক্রবার) সকালে শ^াশুরীকে জানালে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। এরপর গত ১২জুন (সোমবার) বিকেলে বাদাঘাট লাইফ কেয়ার মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে পরিক্ষা-নিরীক্ষা করার পর প্রবাসীর স্ত্রী ৪ মাসের অন্তঃসত্বা এই বিষয়টি নিশ্চিত হয়। কিন্তু লম্পট কালা মিয়া এখনও পর্যন্ত ভোক্তভোগী গৃহবধুকে গ্রহণ করেনি, দেয়নি তার গর্ভে থাকা সন্তানের অধিকার।
এব্যাপারে অভিযুক্ত কালা মিয়া বলেন- আমার দ্বারা এই ঘটনা ঘটেনি। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি জানতে পারছি ওই গৃহবধুর দেবররাই এঘটনা করেছে। মেঝো দেবর আশিক মিয়া বলেন- ডাক্তারী পরিক্ষা করে গর্ভে থাকা সন্তানের আসল বাবাকে সনাক্ত করা হোক। এবং যে ব্যক্তি আমাদের মান-সম্মান নিয়ে খেলা করছে তার কঠিন শাস্থি কামনা করছি।
দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন- আন্তঃসত্বা গৃহবধুর মামলাটি দায়ের হওয়ার পর, এঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে মামলার প্রধান আসামী কালা মিয়াকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। যাবতীয় আলামত সংগ্রহ করে এব্যাপারে শীগ্রই আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।