নিজস্ব প্রতিনিধি : নারী অধিকার আন্দোলন আর দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন এক সূত্রে গাঁথা’ এ শ্লোগান নিয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চাঁদপুরের আয়োজনে ‘টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন ও নারী’ শীর্ষক ‘নারী সমাবেশ’ গতকাল সোমবার চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবনস্থ (২য় তলা) এলিট চাইনিজ এন্ড রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয়। সনাক চাঁদপুরের সহ-সভাপতি ও নারী সমাবেশ আয়োজক উপ-কমিটির আহ্বায়ক কৃষ্ণা সাহার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম (সেবা)। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার শামস্ন্নুাহার পিপিএম (সেবা) বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্যে একজন মায়ের ভূমিকা অনেক। একজন মা’ই পারেন তার সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে।
মা ও বাবাকে তার প্রতিটি সন্তানকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে এবং তাদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আমাদের সন্তানকে মাদক, ইভটিজিং, দুর্নীতি, অনিয়ম বা অন্য যে কোনো খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখতে পারি। তিনি মায়েদের বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দুর্নীতি বা নীতি বহির্ভূত কাজ শুধুমাত্র টাকা-পয়সার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর নানাবিধ ক্ষেত্র রয়েছে। তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নারীদের অধিকার আদায়ে নারীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ সমাজে নারীরা কোনো না কোনোভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এবং এ সমস্ত বাধা পেরিয়েই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারীদেরকে নিজ নিজ মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আগামীতে গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজন করবেন এবং এজন্যে তিনি সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান। তিনি নারীদের নিয়ে এ ধরনের আয়োজন করার জন্যে সনাককে ধন্যবাদ জানান। বিশেষ অতিথির বক্তেব্যে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী বলেন, নারীরা সচেতন বলেই তারা আজকে এ সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন। নারীদের আরও দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে হবে। নারী মুক্তি ও জেন্ডার সমতার জন্যে আমরা প্রতিনিয়ত আন্দোলন করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে কাজ করি তাহলে এ সমাজে আর দুর্নীতি থাকবে না। একজন আদর্শ মা হিসেবে নিজের সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। সকল ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে সন্তানদের দূরে রাখার জন্যে মায়েদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। স্বাগত বক্তব্যে সনাক সভাপতি কাজী শাহাদাত বলেন, আমরা মূলত দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছি। এজন্যে আপনাদের সকলের সহযোগিতা দরকার। দুর্নীতি আজ একটি সামাজিক ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নারী পুরুষের সম-অধিকার, নারী পুরুষ উভয়ই যাতে একত্রে সমভাবে কাজ করে এগিয়ে যেতে পারে এজন্যই মূলত আমাদের আজকের এ আয়োজন। আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি আজকের এই সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্যে সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান। সভাপতির বক্তব্যে কৃষ্ণা সাহা বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতিও খোঁজখবর রাখবো। তিনি আরও বলেন, একটি পরিবারের মুল চালিকা শক্তি হলো নারী। বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হলে নারী-পুরুষ সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সনাক সদস্য ইসমত আরা সাফি বন্যা ও ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়ায় যৌথ উপস্থাপনায় টিআই, টিআইবি ও সনাক সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং দুর্নীতিবিরোধী নারী সমাবেশের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য তুলে ধরেন সনাক চাঁদপুরের জেন্ডার বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপিকা শাহানারা বেগম, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ও সমাবেশের উপর কার্যপত্র/ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সনাক সদস্য অধ্যাপিকা সবিতা বিশ্বাস। উপস্থাপিত কার্যপত্র/ধারণাপত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, ভূমি, জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীদের দৃষ্টিতে সমস্যা (সুশাসনের সঙ্কট) ও সমাধানে সুপারিশমূলক মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মায়া মজুমদার, ওয়াইডবিস্নউসিএ’র সাধারণ সম্পাদক পাপড়ি বর্মন, ৪নং গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাছিনা পান্না। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সেন্ট্রাল ইনার হুইল ক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মাহমুদা খানম, বর্তমান সভাপতি মুক্তা পীযূষ, সনাক চাঁদপুরের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষিকাবৃন্দ, বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন কলেজের ছাত্রীবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, ইয়েস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ এবং টিআইবি চাঁদপুরের কর্মী ও সাংবাদিকবৃন্দ।