বিশেষ প্রতিনিধি : যৌতুকলোভী পরিবারের হাতে নির্যাতিত গৃহবধূ তাফুরা খাতুন আজ ১ সপ্তাহ যাবৎ নিখোঁজ রয়েছেন। পিতামাতার আশঙ্কা, তাকে স্বামীর পরিবারের লোকজন গুম ও হত্যা করেছে। মেয়ের সন্ধানে তারা দ্বারস্থ হয়েছেন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের নিকট। পুলিশ সুপারের নিকট প্রদত্ত আবেদনপত্রে জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের এছহাক আলী সরকার ও রহিমা খাতুনের ২য় মেয়ে তাফুরা খাতুনের সাথে গত ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১১ চাঁদপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের মমিন পাড়ার মজিদ সরকারের পুত্র রুহুল আমিনের বিয়ে হয়। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের ঘরে ১ টি কন্যা সন্তান জন্মলাভ করে। এর কিছু দিন পর তাফুরার স্বামী মোঃ রুহুল আমিন অর্থ উপার্জনের আশায় মালয়েশিয়া যান।
তিনি মালয়েশিয়া যাওয়ার পর স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করলেও বিগত কয়েক মাস যাবৎ তিনি যোগযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন। এরই মাঝে তাফুরার উপর তার শ্বশুর মোঃ মজিদ সরকার, শাশুড়ি নয়ন তারা, দেবর মোঃ আল আমিন, ননদ খাদিজা আক্তার, পারভীন আক্তার অকথ্য নির্যাতন শুরু করেন এবং গৃহনির্মাণ কাজের জন্য ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন। গৃহবধূ তাফুরা বেগম তাদের অত্যাচার প্রথমে মুখে বুঁজে সহ্য করলেও পরবর্তী সময় তা আর সইতে না পেরে বাবা-মাকে জানান। গরীব অসহায় ক্ষেত মজুর পিতা মেয়ের সংসারের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে আত্মীয় স্বজনের কাছে ধার-দেনা করে ৩ লক্ষ টাকা শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে দেন। কিন্তু বাকি আরো ২ লক্ষ টাকা দেয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর ও ননদ তার উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। টাকার জন্য দিনদিনই তাদের নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে।
মেয়ের ওপর এহেন নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে তার বাবা-মা বার বার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি দেবরের কাছে বিচার দাবি করেও কোনো বিচার পায়নি। বরং উল্টো তাদেরকে টাকা দেয়ার জন্যে চাপ প্রয়োগ করেন। যদি টাকা দিতে না পারে তাহলে তাদের মেয়ে তাফুরাকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি প্রদান করেন। নিরূপায় হয়ে তাফুরার পিতৃপক্ষ সর্বশেষ রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ হযরত আলীর শরণাপন্ন হন। গত প্রায় ১ মাস পূর্বে হযরত আলী তার শহরস্থ কোড়ালিয়া রোডের বাসভবনে উভয় পক্ষকে নিয়ে বিচার-মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার কিছু দিন অতিবাহিত হতে না হতেই গৃহবধূ তাফুরা খাতুনের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদে তার পিতা এছহাক আলী সরকার মাতা রহিমা খাতুন মেয়ের সন্ধানে তার স্বামীর বাড়িতে ছুটে আসেন।
তারা মেয়ের স্বামীর বাড়িতে মেয়ের সন্ধানে এলে মজিদ সরকার ও তার ছেলে মোঃ আল-আমিন সরকার গং তাদের উপর মারমুখী হয়ে উঠেন এবং তাদের মেয়ে তাফুরা কোথায় আছে তা জানতেও তারা ব্যর্থ হন। এমনি পরিস্থিতিতে অসহায় পিতামাতা তার মেয়ের সংবাদ না পেয়ে অজানা আশঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়েন। তারা মনে করেন, তাদের মেয়েকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন হত্যা বা গুম করে ফেলেছেন। এরই প্রতিকার চেয়ে অসহায় পিতামাতা তার মেয়ের সন্ধান ও যৌতুক লোভী পরিবারের বিচার দাবি করেছেন পুলিশ সুপারের নিকট। তারা গত ১২ অক্টোবর এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন। তাদের আশা, পুলিশ সুপার যৌতুকলোভী পরিবারের উপযুক্ত বিচারপূর্বক তাদের সন্তান উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।