ডেক্স রিপোর্ট: মোবাইল ফোনে পরিচয়ের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্কে জরিয়ে পড়ে কুমিল্লার সুমি আক্তার। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের এক পর্যায়ে পরিবারের ও স্বজনদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করে নাজমুল হাসান নামের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের এক যুবক’কে। বিয়ের পর মাস শেষ হতে না হতেই লাশ হয়ে দেশে ফিরতে হল সুমিকে।
গতকাল রবিবার দুপুরে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকার আন্তর্জাতিক সীমারেখায় শশীদল বিওপির বিজিবি ও ভারতের আশাবাড়ী বিএসএফ এর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ব্রাহ্মণপাড়া ও ভারতের কলমচুড়া থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সুমির লাশ বিজিবির নিকট হস্তান্তর করে বিএসএফ।
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী আশাবাড়ী এলাকার লোকজন ও সুমির স্বজনরা জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কলমচুড়া থানা এলাকার রহিমপুর গ্রামের আব্দুল হালিমের ছেলে নাজমুল হাসান এর সাথে গত এক মাস পূর্বে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানার সুজানগর এলাকার মৃত ইদ্দ্রিস মিয়ার মেয়ে সুমি আক্তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্পর্কে জরিয়ে পারিবারিক ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের এক সপ্তাহ পরে পাষাণ্ড স্বামী সুমিকে যৌতুকের জন্য মারধর ও চাপ প্রয়োগ করে। এক পর্যায়ে সুমি স্বামী সংসারে সুখের কথা ভেবে স্বজনদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে স্বামী নাজমুল হাসানকে দেয়। তার পরও সুমির স্বামী নাজমুল আরো যৌতুকের জন্য সুমির উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের মাত্র বাড়িয়ে দেয়। এতে সুমি ধৈর্য্য হারিয়ে স্বামী সংসার না করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার স্বামীকে যৌতুকের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে।
এনিয়ে ঘটনার দিন গত ১৮ নভেম্বর বিকেলে সুমি স্বামীর সাথে ঝগড়া করে আশাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা পর তার স্বামী ও তার মামা শ্বশুর আব্দুল জলিল বাংলাদেশের সীমানা থেকে সুমিকে ধরে নিয়ে ভারতের সীমানায় বেধম মারধর করে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে এবং বস্তা বন্দী করে ভারতের কাঁটা তারের বেড়া অতিক্রম করে বাংলাদেশের সীমানায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টা কালে বিএসএফ এর দৃষ্টিগুচর হয়। এসময় ভারতের সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) এর উপস্থিতি টের পেয়ে স্বামী নাজমুল ও মামা শ্বশুর আব্দুল জলিল পালিয়ে যায়।
ঘটনাস্থল থেকে বিএসএফ সুমিকে উদ্ধার করে ভারতের বস্কনগড় সরকারি হাসপালে নেওয়ার পথে সুমি মারা যায়। পরে তার লাশ ভারতে ময়না তদন্ত করে ভারতের কলমচুড়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা নিয়ে গত শনিবার দুপুরে সুমির লাশ বাংলাদেশে হস্তান্তর করে। এসময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ৬০ ব্যাটালিয়ন বিজিবির নন কমিশনার অফিসার মেহেদী হাসান, শশীদল বিজিবির কম্পানী কমান্ডার নায়েব সুবেদার টিপু সুলতান, ব্রাহ্মণপাড়া থানার এসআই সুনিল সহ বিজিবি ও থানা পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা। অপরদিকে ভারতের আশাবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্প কমান্ডার এস কে মিতু ও কলমচুড়া থানা পুলিশ এবং বিএস এফ ও পুলিশের সদস্যগণ।
এ ব্যাপারে শশীদল বিজিবির কম্পানী কমান্ডার নায়েব সুবেদার টিপু সুলতান সত্যতা স্বীকার করে জানান, ভারতে সুমির লাশ ময়না তদন্তের পর একটি মামলা করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারত এবং ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশের উপস্থিতিতে বিএসএফ আমাদের নিকট সুমির লাশ হস্তান্তর করে। পরে আমরা একই দিনে সুমির লাশ তার স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করি।