ইব্রাহিম খলিল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: অবৈধভাবে নিজেদের নামে দোকান বরাদ্দ নেওয়ার প্রতিবাদ করা ও দুর্নীতির প্রশ্রয় না দেওয়ায় দুই বারের নির্বাচিত পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন কাউন্সিলরবৃন্দ। বিশেষ করে কাউন্সিলরদের দুর্নীতির প্রমাণ মেয়রের হাতে আসায় নিজেদের রক্ষায় মিথ্যা কাল্পনিক অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। অভিযোগ তুলে রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সাতক্ষীরা পৌর সভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতী।
সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ করে সোমবার (৭ ফেব্রয়ারি) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন পৌর সভার কাউন্সিলরবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাতক্ষীরা পৌর সভার কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান। এসময় তিনি পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিধিনিষেধ পরিপন্থী কার্যক্রম পরিচালনা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও সাতক্ষীরা পৌরসভার মর্যাদা হানিকর কার্যকলাপ করার অভিযোগ করেন। এরমধ্যে, পানির বিল মওকুফ করা, বাজার ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, ময়লার ও সেপটিক ট্যাংক পরিস্কারের টাকা আত্মসাৎ, পৌরকর ও লাইসেন্স ফি মওকুফ, ভূয়া ভ্রমণ ও আপ্যায়ন বিল, বাজেট ছাড়া টেন্ডার, দলীয় কর্মীদের আর্থিক সাহায্য প্রদান, পৌর এলাকার ঠিকাদারসহ ব্যক্তিগত গাড়িতে অকটেন ক্রয়ের অভিযোগ উল্লেখ করেন।
তবে এসব বক্তব্যের পর সাংবাদিকরা বলেন, এ ধরনের অনিয়মের অভিযোগ জনগণের বিরুদ্ধে। প্রকৃতপক্ষে নাগরিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা (বিভিন্ন ফি মওকুফ) জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব ও কর্তব্য। পানির বিল/ পৌরকর ও লাইসেন্স ফি মওকুফ করার বিষয়টি জনস্বার্থে। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়িতে তেল ক্রয়ের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিপত্রের ছ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ব্যক্তিগত গাড়ি অফিসের কাজে ব্যবহারের জন্য দৈনিক ৭ লিটার হিসাবে জ্বালানী পৌরসভার অর্থে ক্রয় করতে পারবেন। অপরদিকে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি.আর) কর্মসূচির আওতায় সাতক্ষীরা পৌরসভায় ২য় পর্যায়ে বরাদ্দকৃত ৮ লক্ষ ১১ হাজার ১শ ৭টাকার ১৮টি প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ গ্রহণ করার অভিযোগ কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ ধামাচাপা দিতে মেয়রের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে মনগড়া অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবী নাগরিকদের।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ বলেন, আমি টানা দুইবার বিপুল ভোটে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি, জনগণের উন্নয়নের কাজ করাটাই লক্ষ্য। মেয়র হিসেবে পৌর কর, ট্রেড লাইসেন্স, পানির বিল মওকুফ ইতোপূর্বে যে সব মেয়র মহোদয়রা ছিলেন তারাও করেছেন। আমিও পৌরবিধি অনুযায়ী এবং পূর্বের মেয়রদের সাথে সমন্বয় রেখেই অনুদান এবং বিল মওকুফ করেছি। কোন ধরনের অনিয়ম আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তবে পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ আমার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে না পেরে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমি মনে করি কাউন্সিলরবৃন্দ যে অভিযোগ করেছেন, সেটি মেয়রের বিরুদ্ধে করেনি। সাতক্ষীরা পৌরসভার জনগণের বিরুদ্ধে করেছেন, নিজেদের বিরুদ্ধে করেছেন। বিশেষ করে পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপা অনৈতিকভাবে নিজের নামে ৬টি দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন।
তার ভাগ্নে ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিমেল তার বাবা এবং মায়ের নামে অনৈতিকভাবে আরো ২টি দোকান বরাদ্দ রেখেছেন। এর প্রতিবাদ করায় তারা আমার উপর ক্ষুদ্ধ। এছাড়া ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পৌর প্যানেল মেয়র (১) কাজী ফিরোজ হাসান দীর্ঘদিন ধরে আমাকে সরিয়ে নিজে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। যাতে তারা পৌরসভায় অনিয়ম দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করতে পারেন। সে কারণে গভীর চক্রান্ত করছেন তারা। আমি মেয়র থাকতে পৌরসভায় কোন অনিয়ম হতে দেবো না। তিনি এ বিষয়ে সাতক্ষীরায় কর্মরত সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন