স্টাফ রিপোর্টার: চাঁদপুর সদর উপজেলার গাজীপুর হরিপুর নেছারিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক অর্থ আৎসাতের অভিযোগ পাওয়া গিয়াছে। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মাদ্রাসার অধ্যাপক মোঃ নুরুল কবির ফান্ডের ব্যপক অনিয়ম করে টাকা আৎসাত করেছে। এ বিষয়ে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। কমিটির সহ সভাপতি আবুল হাছনাত চৌধুরী। অভিযোগ থেকে জানা যায়, অধ্যক্ষ নামে বেনামে বিভিন্ন ভাউচারের মাধ্যমে কমিটিকে অবহিত না করিয়া ব্যাপক অর্থ আৎসাত করিয়াছেন।
এ বিষয়ে গত ১৯/১০/২০১৭ইং তারিখে মাদ্রাসায় ম্যানেজিং কমিটি সাথে তাহার বাক বিতন্ড হয়। তারপর ম্যানেজিং কমিটি গর্ভনিং বডির সভাপতি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডলের বরাবর একটি মৌখিক অভিযোগ করিলে জেলা প্রশাসক আয়-ব্যয় হিসাব নিরিক্ষণের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেন। উক্ত কমিটি হিসাব যাচাই বাছাই করে দেখতে পান অধ্যক্ষ সাহেব মাদ্রাসার ফান্ড থেকে চার লক্ষ ছত্রিশ হাজার একশত ছিয়াত্তুর টাকা আৎসাত করিয়াছেন। তখন অধ্যক্ষ সাহেব তদন্ত কমিটির সাথে তর্কবির্তক করে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কিছু সময় চান। দীর্ঘ দিন পার হওয়ার পরও টাকা ফেরত না দেওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে কমিটির সহ-সভাপতি আবুল হাছনাত চৌধুরী গত ১৯/১১/২০১৭ইং তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন।
গতকাল মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১১টায় মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার ফোন করার পরও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মোঃ আঃ বারী সিদ্দিকীর সাথে এই অর্থ আৎসাতের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ক্রাইম এ্যাকশনকে জানান, এই গাজীপুর (হরিপুর) নেছারিয়া ফাযিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসাটি গত প্রায় একশত তের বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমি প্রায় ২২ বছর যাবৎ ভাইস প্রিন্সিপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আর এই প্রতিষ্ঠাটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন বর্তমান ছরছীনা শরীফের পীর সাহেব হুজুরের দাদা হুজুর মাওলানা নেছার উদ্দিন আহমেদ। তার নিজের নামেই এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরপর ৪ বার এই প্রতিষ্ঠানটি বিলিন হয়েছিল নদী গর্ভে বর্তমানে এটি চাঁদপুর সদর উপজেলার ১২নং চান্দ্রা ইউনিয়নে হরিপুর চৌধুরী বাড়িতে অবস্থিত। এ প্রতিষ্ঠানটি অত্যান্ত সুনামের সাথে পরিচালিত হইতে ছিল। যেই দিন থেকে এই অধ্যক্ষ মোঃ নূরুল কবির এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন তখন থেকেই নানা অনিয়ম শুরু হয়। সর্বশেষ অনিয়ম হলো প্রতিষ্ঠানে অর্থ আৎসাত। যা অত্যান্ত নিন্দনীয় অপরাধ। আমি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মাননীয় জেলা প্রশাসক ম্যানেজিং কমিটি ও সুশীল সমাজের জোড়ালো দাবি জানান প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের স্বার্থে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা।
এ বিষয়ে হাবিবুর রহমান নামে এক অভিভাবক সদস্য বলেন, আমরা নিজেরা অধ্যক্ষের সাথে অর্থ আৎসাতের বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক বার বসেছি কিন্তু আশানুরূপ কোন ফল না পেয়ে গত ১৯/১১/২০১৭ইং তারিখে সহ-সভাপতি আমাদের সম্মতি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেন। সে অর্থ আৎসাত করে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে। তদন্ত পূর্বক তার ব্যবস্থা না নিলে সুনাম ধন্য এই প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হয়ে যাবে।
অত্র মাদ্রাসায় শিক্ষক প্রতিনিধি মাওলানা মোঃ এনায়েত উল্লাহ ক্রাইম এ্যাকশনকে জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ যে চার লক্ষ ছত্রিশ হাজার একশত ছিয়াত্তুর টাকা আৎসাত করিয়াছেন তা স্বত্ত কিন্তু অধ্যক্ষ সাহেব তাহার খাম খেয়লি পনার কারণে এই মাদ্রাসার বিশৃঙ্খলা সৃষ্ঠি হচ্ছে। তা আদো ঠিক নয়। মাদ্রাসার উন্নয়নের স্বার্থে এর একটি সঠিক সমাধান হওয়া উচিত।
আরো এক অভিভাবক সদস্য মোঃ সেলিম পাটওয়ারী তিনি জেলা প্রশাসক ৩ সদস্য বিশিষ্ট যে আহবায়ক কমিটি করেছিলেন সে তিন জনের এক জন। সে জানায়, পরিপূর্ন ভাবে হিসাব করিলে অধ্যক্ষ প্রায় ছয়-সাত লক্ষ টাকা দেনা হবে কিন্তু আমরা ছোট ছোট বিষয়গুলি এরিয়ে গিয়ে বড় বড় বিষয়গুলি হিসাব করে চার লক্ষ ছত্রিশ হাজার একশত ছিয়াত্তুর টাকা হিসাব দাড় করিয়েছি। অধ্যক্ষ মহোদয় প্রথমে আমাদের কাছে অর্থ ফেরত দেয়ার সময় আবেদন করেন কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন জনের কাছে বলেন বেড়ান হিসাব সঠিক নয়। আমি কোন অর্থ আৎসাত করিনি।
এ বিষয়ে আরো বক্ত্যব রাখেন এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গ। মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক, ছাত্র ও ছাত্রীরা জানান, অধ্যক্ষ সাহেবের এই অর্থ আৎসাতের বিষয়টি ঐ এলাকার সর্ব সাধারণের মাঝে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত পূর্বক এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিলে ম্যানেজিং কমিটিও অধ্যক্ষের মাঝে বড় ধরনের দ্বন্দ হওয়ার আশংকা রয়েছে তাই মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে আকুল আবেদন দ্বিনী শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠাটির দিকে লক্ষ রেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন।