মানিক দাস //
বাংলার ঐতিহ্য গ্রামীণ বৈশাখী মেলায় আগে মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের খেলনার পসরা বসতো। বিশেষ করে ঈদ কিংবা বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি নানা রঙয়ের কারুকার্য করা হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল, নৌকা, পালকি, হাতি, ঘোড়া, টিয়াপাখি, হাঁস, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট খেলনা বিক্রি হতো।
ছোট্ট শিশুদের কাছে ছিল পছন্দনীয় খেলনা। এসব খেলনা পাওয়া যেত অনেক কম দামেও। কিন্তু বর্তমান প্লাস্টিকের যুগে মাটির তৈরি এসব খেলা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।
ছেলে-মেয়েদের কাছেও এগুলোর চাহিদা এখন আর তেমন একটা নেই বলল্লেই চলে। প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার দিকে ঝুঁকে পড়ছে শিশুরা। ফলে অনেকটা বিলুপ্তির মুখে মাটির এসব মৃৎশিল্প।
ঈদ বা পহেলা বৈশাখের মেলা উপলক্ষে কুমার সম্প্রদায়ের লোকেরা মাটির তৈজসপত্র তৈরি করতেন।
অনেকের কাছে মৃৎশিল্পই ছিল জীবিকার প্রধান মাধ্যম। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের হাত ধরে মেলাতে ছড়িয় পড়তো মাটির তৈরির বিভিন্ন পণ্য। কিন্তু মাটির তৈজসপত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় এসব ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে কুমার সম্প্রদায়ের লোকেরা। তাই এখনকার মেলায় মাটির খেলনা তেমন চখে পড়ে না।
বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা ছোটবেলায় মাটির তৈরি খেলনায় আমাদের ভরসা ছিল। ঈদের দিন ভোর বেলায় বন্ধুরা মিলে ঈদের মাঠে আসতাম। মাটির খেলনা কিনে বাড়ি ফিরতাম। তখন প্লাস্টিকের খেলনা বলতে কিছুই ছিল না। মাটির খেলনা দেখলে পুরনো শৈশব মনে পড়ে যায়।
মাটির খেলনা বিক্রেতা মুক্তার হোসেন বলেন, প্রতি ঈদের মেলায় মাটির তৈরি খেলনার পসরা সাজিয়ে বসতাম। একসময় প্রচুর বিক্রি করতাম। তখন প্লাস্টিকের খেলনা ছিল না। কিন্তু এখন বিক্রি কমে গেছে। ছেলে-মেয়েরা মাটির তৈরি জিনিসপত্র কম কিনছে। এখন কোনোভাবে চলছে, আর কয়েক বছর পর শিশুরা মৃৎশিল্প কি তাই বলতে পারবে না।
তবে এবছর চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আয়োজনে ও চাঁদপুর পৌরসভার পৃষ্ঠপোশকতায় অনুষ্ঠিত মাসব্যাপী বাঙালি সাংস্কৃতিক উৎসব বৈশাখী মেলায় সেই পুরনো ঐতিহ্যের মাটির তৈরি খেলা সামগ্রীর বিশাল আকারের স্টল চোখে পরেছে। তা দেখে সবাই কে তার শৈশবের অনেক স্মৃতি স্মরন করিয়ে দিচ্ছে। যা দেখে চাঁদপুর ৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি নিজেই মাটির ব্যাংক কিনে নিলেন।